বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শুক্রবার জনজোয়ারে ভাসলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কাতারে কাতারে লোক এ দিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে। যা দেখে নায়িকার অনুভূতি, মানুষের মনে আলাদা জায়গা না থাকলে এই ঘটনা ঘটে না। আনন্দবাজার অনলাইনকে সে কথা জানিয়ে তিনি স্মরণ করেছেন সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেছেন, “আমি যখন পৌঁছেছি, তখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলীয় অফিসের কার্যালয় থেকে দেহ নীলরতন সরকার হাসপাতালের পথে। আমার জন্য শববাহী শকট কয়েক মুহূর্তের জন্য থামানো হয়েছিল। জনস্রোতে ভাসতে ভাসতে ওঁর গাড়ির কাছে পৌঁছলাম।”
যাঁকে ঘিরে শেষ মুহূর্তেও এত জনসমাবেশ, বেঁচে থাকতে তিনি কেমন ছিলেন? নায়িকার জবাব, “ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত। আর প্রচণ্ড রসিক। কথায় কথায় বেশ মজা করতেন। ওঁর আমলে বেশ কয়েক বার মুখোমুখি হয়েছি। যত বার সামনাসামনি হয়েছি, হাসিমুখে কথা বলেছেন।” ঋতুপর্ণার বিয়ের সময় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে জ্যোতি বসু। তাঁর সঙ্গে নায়িকাকে আশীর্বাদ করতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এসেছিলেন।
ঋতুপর্ণার ছেলে অঙ্কনের জন্ম আমেরিকায়। ছেলে হওয়ার খবর শুনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নায়িকাকে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “একেবারে বাইরে গিয়ে ছেলের জন্ম!” অভিনেত্রীর ‘পারমিতার একদিন’, ‘আলো’ ছবি দু'টি প্রয়াত রাজনীতিবিদের প্রিয় ছিল। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর তাই অভিনেত্রীকে আলাদা করে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
বরাবর আপাদমস্তক সাদা পোশাকে সজ্জিত এই মানুষটি নায়িকার কাছে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ ছাড়াও আদ্যন্ত ভালমানুষ। যাঁকে সারা ক্ষণ শিক্ষা, রুচি, ব্যক্তিত্বের অদৃশ্য বলয় ঘিরে থাকত। অভিনেত্রীর মতে, মৃত্যুর পরেও তাই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সুন্দর চেতনার প্রকাশ ঘটেছে দেহদানের মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, “আমার পিসিমা, পিসেমশাই একই পথের পথিক। আমিও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পথেই হাঁটব। দাহ করার বদলে দেহ দান করে গেলে আমার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়তো কোনও মৃত্যুপথযাত্রীকে জীবনের পথে ফেরাতে পারবে। তার মধ্যে দিয়ে আমিও বেঁচে থাকব চিরকাল।”