(বাঁ দিকে) পায়েল সরকার, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
১৪ অগস্ট প্রথম রাত দখলের দিন থেকে পথে বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামীরা। আর প্রায় সে দিন থেকেই কোনও না কোনও ভাবে তাঁরা কটাক্ষের শিকার। কখনও শাঁখ বাজিয়ে, কখনও ‘কুম্ভীরাশ্রু’র কারণে। কখনও উপস্থিতিতে, কখনও অনুপস্থিতির কারণে। হাসলে, সাজলে, না-সাজলে এমনকি আসল মোমবাতি না জ্বালালেও! টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কি তা হলে সাধারণ মানুষ এবং নেটাগরিকদের ‘সফ্ট টার্গেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন? প্রতিবাদের নামে তাঁদের প্রতি জমে থাকা ক্ষোভ এই সুযোগে উগরে দিচ্ছে জনতা?
হালের কথাই ধরা যাক। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় যে দিন থেকে শহরে পা রেখেছেন, সে দিন থেকেই তিনি প্রতিবাদে। হয় মিছিলে, নয় রাত দখলে। মঙ্গলবারেও তিনি সারা রাত বিধান নগরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নায় উপস্থিত ছিলেন। এই প্রতিবাদের পাশাপাশি দিন দুই আগে তাঁর পুজোর ছবি ‘টেক্কা’র প্রচার করেন সমাজমাধ্যমে। ব্যস, আগুনে যেন ঘি পড়ল। রে রে করে তাঁর মন্তব্য বিভাগ কটাক্ষ বানভাসি। কেউ আবার ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কেও জুড়ে দিলেন। সমাজমাধ্যমে প্রায় এ রকম বার্তা দেখা গেল— অভিনেত্রী আর পরিচালক মিলে আন্দোলনও করছেন, আবার কাজের প্রচারও চালাচ্ছেন। যেন চমৎকার খেলায় মেতেছেন তাঁরা।
তা হলে অভিনেতারা কী করবেন? তাঁরা প্রতিবাদের পাশাপাশি কাজ করবেন? না কি শুধুই প্রতিবাদ করবেন? যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁরা কি তা হলে মন চাইলেও প্রতিবাদে শামিল হতে পারবেন না? কারণ, খ্যাতনামীরা প্রকাশ্যে আসেন তাঁদের পেশার সুবাদেই। এই প্রশ্ন নিয়ে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার একাধিক অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বিড়ম্বনায় না পড়তে চেয়ে এবং কটাক্ষ-বিতর্ক এড়াতে মুখে কুলুপ প্রত্যেকের।
কেবল সমাজমাধ্যমে নিজের মতো করে উত্তর দিয়েছেন স্বস্তিকা। তিনি লিখেছেন, “খালি পেটে বিপ্লব হয় না, সাথী! ভাতের জন্যেও লড়তে গেলে ভাতের স্বাদ জানতে হয়। তাই যদি বেঁচে থাকার পন্থাকে আপনারা নিন্দা করতে শুরু করেন, তা হলে খুনের জন্য বিচার চাওয়াটা হিপোক্রেসি নয় কি?” পাল্টা কটাক্ষ হেনে তিনি নিজের পক্ষেও যুক্তি দিয়েছেন। আরও লিখেছেন, “আমার কাজের প্রতি আমার দায় আছে, দায়িত্ব আছে। আমি প্রচার করার জন্য চুক্তিবদ্ধ। কাজের প্রতি ভালবাসার জায়গা থেকে প্রচারও করব নতুন ছবির, আবার আন্দোলনেও থাকব। দুটোই করব। এবং বেশ করব।” তিনি মুখ খোলা মানেই নতুন করে ‘কথা’ তৈরি হওয়া। সে বিষয়েও অভিনেত্রী সচেতন। কিন্তু ভীত নন। তাই তাঁর আরও বক্তব্য, “প্রতিবাদ করছি বলে কিছু মানুষ দেখলাম তার প্রতিবাদ করছেন। অদ্ভুত, এই প্রথম দেখলাম এমন। অসুবিধা নেই। আর কোনও কৈফিয়তও আমি দেব না। আন্দোলন দীর্ঘজীবি হউক।”
স্বস্তিকার মতোই ব্যতিক্রমী আরও এক অভিনেত্রী। তিনি পায়েল সরকার। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন রাখতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তিনি। জবাব দিয়েছেন, “কোথায় লেখা আছে, কাজের পাশাপাশি আন্দোলন করা যায় না? কিংবা আন্দোলন করতে গেলে কাজ করা যাবে না?” পাশাপাশি তিনি মেনে নিয়েছেন, নির্যাতিতার জন্য ন্যায় চেয়ে যত না প্রতিবাদ হচ্ছে, তার থেকে বেশি প্রতিবাদ হচ্ছে খ্যাতনামীদের নিয়ে। তাঁদের শাঁখ বাজানো নিয়ে, কান্নাকাটি নিয়ে, হাসাহাসি নিয়ে, সাজগোজ নিয়ে। এই জায়গা থেকেই অভিনেত্রীর মনে হয়েছে, আন্দোলন বুঝি বেপথু হতে চলেছে!
পায়েলের আরও প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আনন্দবাজার অনলাইন মারফত নেটাগরিকদের কাছে জানতে চেয়েছেন, “ধরুন, আমরা না হয় বসে গেলাম। কিন্তু যাঁরা পর্দার পিছনে থাকেন? স্পট বয় থেকে টেকনিশিয়ান— তাঁদের দায়িত্ব কে নেবেন? খাওয়াবেন কে তাঁদের?” অভিনেত্রী জানিয়েছেন, কারও এখন কিছু ভাল লাগছে না। তার পরেও সিনিয়র চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করছেন। ব্যাঙ্ককর্মী থেকে প্রযুক্তিকর্মী হয়ে সাংবাদিক— প্রত্যেকে তাঁদের কাজ করে যাচ্ছেন। অভিনেতারাও সেটাই করছেন। তাঁর দাবি, সেটে টানা চলতে থাকা শুটিংয়ে কিন্তু কোনও ‘বিনোদন’ নেই। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পান। তাই তাঁর মতে, অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকদের চাইতে তাঁদের সমর্থন জানানো বেশি দরকার, যাঁরা বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দিন আনেন দিন খান।
বক্তব্যের শেষে পায়েলের কথায় শ্লেষ, “এই যে এত কথা বললাম, এ বার আমার পালা। স্বস্তিকার পরে এ বার আমি নেটাগরিকদের ‘সফ্ট টার্গেট’ হব। সকলে রে-রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে।”