(ডান দিকে) কৌশিক কর। গুলশনারা খাতুন (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
সমাজমাধ্যম দেয় বাক্-স্বাধীনতা। যে কোনও কথা, যেমন খুশি বলে দেওয়ার অধিকার। মুখের উপর বলে দেওয়া কথা, কাকে কী ভাবে আঘাত করল এখন আর ভাবেন না প্রায় কোনও মানুষ। ক্রমশই কি কমে যাচ্ছে সহিষ্ণুতা, কমছে পাশের মানুষের প্রতি সম্মানবোধ!
এসব প্রশ্নই আরও এক বার দুই নাট্যকর্মীর উত্তপ্ত বাদানুবাদে। সঙ্গে জড়িয়ে গেল ধর্ম, রাজনীতি, পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন।
নাট্যকর্মী গুলশনারা খাতুন সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, পরিচালক কৌশিক কর সমাজমাধ্যমে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছেন তাঁকে। বুধবার, আনন্দবাজার অনলাইনে গুলশনারা বলেন, “আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রায়ই আক্রমণ করা হয় আমাকে। আমার পরিবার, খাদ্যাভ্যাস নিয়েও চলে অকারণ কটাক্ষ। একপ্রকার অভ্যস্তই হয়ে গিয়েছি। কিন্তু কৌশিক এবার যেটা করলেন সেটা সব কিছুর ঊর্ধ্বে।”
ঠিক কী বলেছেন কৌশিক? গুলশনারার দাবি, তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৌশিক। শুধু তাই নয়, তাঁর অবসাদ, চিকিৎসা, ওষুধ সব কিছু নিয়ে ছুটে এসেছে কটূক্তি।
কৌশিক-গুলশনারার বাগ্বিতণ্ডা। সংগৃহীত।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলশনারা এবং কৌশিক যে ব্যক্তিগত ভাবে খুব বেশি পরিচিত এমন নয়। তাঁদের বাদানুবাদও সমাজমাধ্যমের কোনও মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই। গুলশনারার দাবি, এক প্রবীণ নাট্যাভিনেতার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বাদানুবাদের সূত্রপাত। ওই প্রবীণ অভিনেতার বয়স তুলে কটাক্ষ করেন কৌশিক। তার প্রতিবাদ করাতেই আক্রমণের শিকার হন গুলশনারা। তাঁর দেশ, মানসিক অবসাদ নিয়ে কটাক্ষ করা হয় বলে অভিযোগ। গুলশনারার দাবি, এ ভাবে কৌশিক সমস্ত মানসিক ভাবে অবসন্ন মানুষদের অপমান করলেন।
এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল কৌশিকের সঙ্গেও। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “নাট্য প্রযোজক বিলু দত্তের একটি পোস্টকে ঘিরে কথা কাটাকাটি শুরু। সেখানে আচমকাই ওই প্রবীণ অভিনেতা আমাকে কটাক্ষ করেন। সেই রেশ ধরে গুলশনারাই আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু করেন।”
কৌশিকের দাবি, তাঁর উপরও আক্রমণ নতুন নয়। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, রাজনৈতিক সংসর্গ সব কিছু নিয়েই তাঁকে আক্রমণ করা হয়। ঘটনা হল বছর তিনেক আগে বিজেপি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন কৌশিক। তাঁর অভিযোগ, এর পরেই বিনোদন দুনিয়ার বাম মনোভাবাপন্ন কিছু মানুষ তাঁকে ক্রমাগত আক্রমণ করছেন। কৌশিকের দাবি, গত তিন বছর ধরেই তাঁকে কাজ করতেও দেওয়া হচ্ছে না।
পরে অবশ্য কৌশিক একপ্রকার স্বীকার করেন গুলশনারাকে তিনি ‘অবসাদের রোগী’ বলে আক্রমণ করেছেন। এমনকি, সেই আক্রমণে বাদ পড়েনি ধর্ম এবং দেশ।
যদিও আত্মপক্ষ সমর্থনে কৌশিক পাল্টা অভিযোগ করেছেন, গত তিন বছর ধরে তাঁর উপর মানসিক নির্যাতন চলছে। তাঁর দাবি, শুধুমাত্র মনের জোরে বেঁচে রয়েছেন তিনি। তাই ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন মাত্র।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য কৌশিক বলেছেন, “গুলশনারা মহিলা বলেই এত কথা উঠছে। আমি যে এতগুলো বছর ধরে একই ভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছি, সেই খবর ক’জন রেখেছেন?”