Saayoni Ghosh

ঈশ্বর জানেন কার মনে কী! তাই কেউ পায় মহাদেবের আশীর্বাদ, কাউকে বঞ্চিত করেন রাম: সায়নী

“বাবা আর দুই পোষ্য— এর বাইরে আমার সংসার আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষজন”, বিয়ের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে বললেন সায়নী ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ১৫:২৯
Share:

জনতার আশীর্বাদে যুবনেত্রী থেকে সাংসদ সায়নী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন থেকে সংসদীয় রাজনীতি। যাদবপুর দেখছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মিমি চক্রবর্তী পা রেখেছিলেন সংসদ ভবনে, সঙ্গী ছিলেন বন্ধু নুসরত। সে দিন তাঁদের পোশাক ঘিরে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। এবার সায়নী ঘোষ যাবেন একেবারে সাবেক পোশাকে। হ্যাঁ শাড়ি! শুধু শাড়ি নয়, সাদা শাড়ি। তদুপরি পায়ে হাওয়াই চপ্পল। বাংলার তৃণমূল সাংসদ হিসেবে এর থেকে ‘আইকনিক’ আর কী-ই বা হতে পারে! বলা যায়, রীতিমতো ভাবনাচিন্তা করেই পদক্ষেপ করছেন নতুন সাংসদ।

Advertisement

মঙ্গলবার ভোটগণনার দিন সময় যত গড়িয়েছে, লাফিয়ে বেড়েছে তাঁর জয়ের ব্যবধান। একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তায় বানভাসি মুঠোফোন। সায়নী কিন্তু একটাও দেখে উঠতে পারেননি; তা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে যথেষ্ট। আক্ষেপ রয়েছে আরও একটি বিষয়ে, “আজ যদি আমার মা আর দাদা থাকত!”

মাত্র ৩১ বছর বয়সেই লোকসভার সাংসদ, আপাতত জয়ের ঘোরে আচ্ছন্ন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই ফোনের ও পারে সেই আবেশ ধরা পড়ল তাঁর কথায়। বললেন, “জানেন, কাল জেতার পর খুব মাকে মনে পড়ছিল। মনে হল, মা একাই বোধহয় ৫০ হাজার ভোট দিয়ে দিয়েছে। তাই এই ফলাফল। নইলে, এতটাও আশা করিনি!”

Advertisement

জয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশার চাপও ঘিরে ধরছে তাঁকে। প্রথম বার প্রার্থী হয়েই আড়াই লক্ষের ব্যবধানে জিতেছেন। প্রথম থেকেই রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া সায়নী ভেবে ফেলেছেন পরবর্তী নির্বাচনের কথা। আগামী বার জয়ের ব্যবধান পাঁচ লক্ষে তুলে নিয়ে যেতে হবে, সায়নীর নাকি আপাতত সেটাই ‘পাখির চোখ’।

এ দিকে নিন্দকে বলছে, ‘ত্রিশূল-কন্ডোম বিতর্ক’ দিয়ে শুরু। ভোটের দিন বা জেতার পরেও সেই ত্রিশূলের কাছেই আত্মসমর্পণ...! শুনে হেসে ফেলেছেন সায়নী। বলেছেন, “মনে হচ্ছে, ভগবান আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন। উনি আশীর্বাদ না করলে এই বয়সে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। আসলে ঈশ্বরও বোঝেন, কে কোন মানসিকতা নিয়ে তাঁর দরবারে আসেন। তাই কেউ মহাদেবের আশীর্বাদ পান। কেউ বা রামের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত!”

সায়নীর মঙ্গল আর বুধবারের মধ্যে কি আকাশপাতাল ফারাক?

অকপটে সায়নী জানিয়েছেন, ফারাক রয়েছে কিছুটা। তবে পুরোটা নয়। যেমন, মঙ্গলবার তিনি বজরঙ্গবলীর পুজো করেন। নিরামিষ খান। ফল বেরোনোর টেনশনে সারা দিন কিছু খেতেই পারেননি! সন্ধেয় চা আর শিঙাড়া ছিল। রাতে রাজমা চাওল। বুধবার সকালে সায়নীয় বাবা ‘সাংসদ মেয়ে’র কাছে আবদার করেছেন, বাজারে খুব ভাল মৌরলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া, বাড়িতে ফিনাইলও যে শেষ! কিন্তু এখনই একা একা বাইরে বেরোতে পারছেন না নতুন সাংসদ। তাঁর কথায়, “বাবাকে বলেছি, চিন্তা করো না। মাছ, ফিনাইল আনিয়ে দিচ্ছি।”

সাংসদে এই সাজেই যাবেন সায়নী? নিজস্ব চিত্র।

সায়নী কি আর আগের মতো বাজার করতে পারবেন না?

শুনেই হাঁ হাঁ করে উঠেছেন, ‘কেন পারব না! সব পারব।’ বাড়ির কাছের বাজারে যাবেন বলে জানিয়েছেন সায়নী। যাবেন নির্বাচনী এলাকার বাজারেও। শুধু কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। এখনই কতটা কী করা যাবে— সেটা বুঝে নিতে একটু সময় লাগছে, এই মাত্র। সঙ্গে রসিকতা, তাঁর বাবা গত রাতে একটু থমকে গিয়েছিলেন। তার পর খুব খুশি। অভিনেত্রী থেকে তাঁর যুবনেত্রী হয়ে ওঠার বিষয়টা সহজেই মেনে নিয়েছিলেন। মেয়ে বক্তব্য রাখছে, তিনি দেখেছেন। তবে মাঝখানে কিছুটা সময় অন্ধকার। জেলবন্দি থাকা বা ইডির তলব— সেই সময় তাঁর মা-বাবার মনে হয়েছিল, মেয়ে কোনও ভুল করছেন না তো! বুধবার সেই মেয়েই আচমকা এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন জেনে খুব খুশি সায়নীর বাবা। তবে প্রাথমিক ভাবে ধাতস্থ হতে একটু সময় নিয়েছেন।

এ দিকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর একটা মুহূর্তও নষ্ট করতে চান না তিনি। এ দিন দুপুরে তিনি বারুইপুর (পূর্ব)-এলাকায় প্রথম যাচ্ছেন। সেখানকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে সেরে যাবেন সোনারপুর (উত্তর)-এ। সেখানেও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

কিন্তু এত কিছুর মধ্যে শরীরটাকেও তো দেখতে হবে! তাই খেয়াল রাখবেন, যাতে অন্তত এক কিলোমিটার হাঁটতে পারেন। সন্ধেয় পা রাখবেন নির্বাচনী এলাকা যাদবপুরে। কাউন্সিলরদের নিয়ে পুজো দেবেন স্থানীয় এক মন্দিরে। সংলগ্ন বাজারে গিয়ে সেরে নেবেন জনসংযোগ।

এখানেও কি আবার শিবের আরাধনা?

দরাজ হেসে সায়নীর দাবি, “না না! ওঁরা শ্রীকৃষ্ণের পূজারি। হরিনাম হবে।” একটু থেমে জানালেন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন। কথা বলতে বলতেই উঠল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। শুনেই উচ্ছ্বসিত সায়নী, “নেতা হলে এমনটাই হতে হয়। লম্বা প্রচারে অভিষেক সবচেয়ে কম দিন নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন। তার পরেও সাত লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। ওঁকে দেখে শিখতে হয়।”

জনসংযোগ, বৈঠকের পাশাপাশি সংসদ ভবনে পা রাখার প্রস্তুতিও জোর কদমে শুরু করে দিয়েছেন সায়নী। ওখানেও গায়ে কি সাদা শাড়ির আঁচল জড়িয়ে, পায়ে সাদা চপ্পল পরেই যাবেন? সায়নীর বিনীত জবাব, “হ্যাঁ, ও ভাবেই যাব। সবার বক্তব্য শুনব। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনা করব। বাংলার যখন যা প্রয়োজন তাই নিয়ে কথা বলব। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করব। আমি তো কোনও দিনই ভয় পাইনি।”

পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনেই সায়নীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ওঁকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। নতুন সাংসদও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। জানিয়েছেন, রাজ তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হাতে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই আজ তিনি এই উচ্চতায়। আগামী দিনে কি তা হলে শুধু রাজের ছবিতেই দেখা যাবে সায়নীকে?

“একেবারেই না”, দাবি তাঁর। জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির অনেক পরিচালক তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁরা তাঁকে নিয়ে ছবি করার বিষয়ে আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি তাই অভিনয়েও সায়নীকে দেখা যাবে। আগের মতো রিল বানাবেন, নতুন ভ্লগও আনতে চলেছেন।

কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন, বিয়ে?

এ বার ঝটতি জবাব, “বাবা আর প্রিয় পোষ্যকে নিয়েই সংসার আমার। মন দিয়ে কাজ করতে গেলে এ টুকুই যথেষ্ট। বিয়ে করলে মনঃসংযোগ নষ্ট হতেই পারে। আমার মুখ চেয়ে বসে আছেন এত মানুষ। আগে তাঁদের সামলে নিই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement