রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবলীনা দত্ত। গ্রাফিক- আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই শামিল দেবলীনা দত্ত। চলতি বছরের দুর্গোৎসবেও যোগ দেননি অভিনেত্রী। পুজোতেও প্রতিবাদ জারি রেখেছেন তিনি। আরজি কর-কাণ্ডের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে এ বার সরব হলেন তিনি। হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমাজমাধ্যমে খোলা চিঠি লিখলেন দেবলীনা।
বৈদ্যবাটী এলাকার একটি পুজো মণ্ডপকে কেন্দ্র করে সমস্যার সূত্রপাত। সেই পুজোয় একটি উটকে মণ্ডপসজ্জার অংশ হিসাবে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। দেবলীনার পশুপ্রেমী হিসাবে পরিচিতি রয়েছে। তাই বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। এমনকি এই কাজ যে ‘অ্যানিম্যাল ক্রয়েলটি অ্যাক্ট’-এর আওতায় পড়ে তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সাংসদ রচনার উদ্দেশে খোলা চিঠিতে কটাক্ষ করে তিনি লিখেছেন, “প্রিয় রচনাদি বৈদ্যবাটী এলাকায় নার্সারি রোড দুর্গাপুজো ওরফে ঐক্যতানের পুজোতে একটি উটকে মানুষের বিনোদনের জন্য প্রর্দশনী স্বরূপ বেঁধে রাখা হয়েছে। মণ্ডপের থিম হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়ো। আমাদের রাজ্যের শিক্ষার মান অনুযায়ী উট বেঁধে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে এটা সেই যর্থাথ থিম। অথচ এই অসভ্য,বর্বরোচিত কাজটা যে আইনত অপরাধ, এবং এই কাজটি অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট-এর আওতায় পড়ে তা স্থানীয় পুলিশ বা অনুদান প্রাপ্ত ক্লাব কর্তারা কেউ জানেন না।”
দেবলীনা প্রশ্ন তুলেছেন, “পুলিশের অনুমতি নিয়ে নাকি এই উটটিকে মণ্ডপে রাখা হয়েছিল। গত কাল আমাদের এবং স্থানীয় কিছু মানুষদের আপত্তিতে উটটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ আবার উটটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে মণ্ডপের পাশে একটি স্থানে এই ভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সমস্ত উটকে রাজস্থানে রাখতে হবে। এ দেশে যদিও সুপ্রিম কোর্ট একটা প্রহসনের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।”
বিষয়টি জানিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে রচনাকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়েছিলেন দেবলীনা। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাননি। তাই খোলা চিঠিতে সরাসরি অভিনেত্রী লিখেছেন, “তোমাকে এই গোটা বিষয়টা গতকাল হ্যোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছিলাম। যে হেতু তোমার রাজনৈতিক এলাকার মধ্যে এই মণ্ডপ, তাই ফোনও করেছিলাম। কিন্তু পুজোয় তোমার নিশ্চয়ই দারুন ব্যস্ততা চলছে। তাই উত্তর দিয়ে উঠতে পারোনি বা ফোন ধরতে পারোনি। অগত্যা সমাজমাধ্যম।”
ঘটনাটির ব্যাপারে শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে জানান দেবলীনা। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। দেবলীনার কথা, “তাই তোমাকে জনসমক্ষে গোটা ব্যাপারটা জানালাম। উটটি ওড়িশা থেকে এসেছে। বাংলার পাশাপাশি তুমি যেখানকার প্রথিতযশা নায়িকা ছিলে। তাই তোমার এলাকায় পুজোর নামে যদি কিছু মানুষ অসহায় পশুর উপর অত্যাচার করে তার দায় তোমার উপর বর্তায়।”
সরাসরি রচনাকে একহাত নিয়ে দেবলীনা লেখেন, “মানুষ ন্যায় বিচারের জন্য ভোট দিয়ে তোমায় জিতিয়েছে। আশা করি, আমার হ্যোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মতো এটা তোমার নজর এড়াবে না। আমি নেহাৎ কলকাতায় নেই নইলে সশরীরে যেতাম উটটাকে উদ্ধার করতে। আপাতত জন প্রতিনিধি রচনা বন্দোপাধ্যায়দি তুমিই ভরসা একটা অবলা প্রাণীর উদ্ধারের বিষয়ে। উট গৃহপালিত প্রাণী। তাই পুলিশের হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনও প্রাণী সাহায্যকারী সংস্থা কিছু করে উঠতে পারছে না উটটাকে উদ্ধারের বিষয়ে। অথচ ক্লাব সভাপতি বলছেন, পুলিশের অনুমতি নিয়েই নাকি এই অপরাধ ওঁরা সংগঠিত করেছেন। বুঝতে পারছি না পুলিশ কী করে অপরাধমূলক কাজের প্ররোচনা দেয়, কার অনুপ্রেরণায়!”