আন্তর্জাতিক থিয়েটার দূরে থাক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও যে বিপুল নাট্যসম্ভার, সে সবের নাগাল পাননি উত্তরপাড়ার সপ্তর্ষি। ফাইল চিত্র।
সিনেমার ভাষা না বুঝলে পরোয়া নেই, সাবটাইটেল বসিয়ে দিব্যি দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু নাটক? মঞ্চের উপর চলতা-ফিরতা জীবন্ত দৃশ্যগুলির ভাষা বুঝতে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তো উপায় নেই!
পড়াশোনায় তেমন ভাল ছিলেন না সপ্তর্ষি মৌলিক। অভিনয় করার সাধ নিয়ে এসে পড়েছিলেন নান্দীকারের কর্মশালায়। তখন ২০১২ সাল। আন্তর্জাতিক থিয়েটার দূরে থাক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও যে বিপুল নাট্যসম্ভার, সে সবের নাগাল পাননি উত্তরপাড়ার সপ্তর্ষি। বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতায় এসে মাঝেমাঝে নাটক দেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সে ভাবে দাগ কাটেনি। নান্দীকার কর্মশালায় যোগ দেওয়ার পর প্রথম চমকটি পেলেন সে বারের নাট্য উৎসবে।
‘এক থেকে বারো’-র মহলার এক দৃশ্যে পরিচালক সপ্তর্ষি। —নিজস্ব চিত্র।
এত রকমের নাটক হয় দেশে? সেই প্রথম স্বপ্নের দরজায় আলো পড়ল সপ্তর্ষির। ডিসেম্বরের ১৬ থেকে ২৫— দশ দিন ধরে উৎসব হত তখন। বাংলা থিয়েটারের দুর্গোৎসবের মতো, নান্দীকার নাট্যোৎসব। সপ্তর্ষি বিস্ময় নিয়ে প্রথম যা দেখলেন, তা হল বৈচিত্র্য। এত রকমের সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা আলাদা আলাদা নাটক দেশেই আছে! এত রকম বাচনভঙ্গি, আগে জানতেন না সপ্তর্ষি।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে নাটকের গল্পগুলো উঠে আসছে। ভাষা তো আলাদা বটেই। সাবটাইটেল ব্যবহার করে সিনেমা দেখা যায়, নাটক তো সে ভাবে দেখার উপায় নেই! শুরুতে ভেবেছিলেন বুঝতেই পারবেন না, মাঝপথে হয়তো উঠে যেতে হবে। কিন্তু দেখতে গিয়ে সপ্তর্ষি বুঝলেন, ভাষা আসলে কোনও বাধাই নয়। কখন যে নাটকের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন টের পাননি, শেষ হওয়ার পর বুঝতে পারেন।
বললেন, ‘‘প্রথম কথা শীতকাল। তার উপর বাড়িতে দশ দিন ধরে একটা মেলা হচ্ছে এত বড়! শুধু এতেই আমি খুব আনন্দে। থিয়েটারে তখনও উৎসাহ নেই। বুঝতে না পারলে উঠে চলে যাব, এই মন নিয়েই বসেছিলাম। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ভিতরে ঢুকে পড়েছি। এনএসডির নাটক বা রতন থিয়ামের প্রযোজনার পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়ের নাট্যদল। অসাধারণ সব নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, আমার দারুণ লাগতে শুরু করল।’’
দর্শকের আসনে বসেই লোভে চকচক করে উঠল সপ্তর্ষির চোখ। সবাই নাট্যোৎসবে অভিনয় করছে! পরিচালনা করছে! তিনি কবে করবেন? সেই ইচ্ছে তাঁকে এক মুহূর্ত স্বস্তি দিচ্ছিল না আর। তাঁর কথায়, “আমি খুব লোভী! অন্যের নাটক দেখতে দেখতে হিংসে হতে শুরু করল, আমি কবে করব? অনুশীলন শুরু হল সেই থেকে। আস্তে আস্তে নিজেকে মঞ্চে দেখতে পেলাম। ছোট চরিত্র থেকে বড় চরিত্র হয়ে নির্দেশনায়। একবারে হয়নি। ২০১৩ সালে একটা প্রযোজনায়, ২০১৪ তে দুটো... এই করতে করতে হয়ে গেল।’’
২০২২ সালে ৩৯ বছরে পা দেবে নান্দীকার নাট্যোৎসব। সেই সঙ্গে সপ্তর্ষিরও স্বপ্নপূরণ। নির্দেশক হিসাবে এই প্রথম উৎসবে ‘এক থেকে বারো’ নাটক নিয়ে আসছেন তিনি। আগামী ২৫ ডিসেম্বর, নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলার শেষ দিনে অ্যাকাডেমিতে মঞ্চস্থ হবে সেই প্রযোজনা।