নৈনিতাল ছেড়ে অভিনেতা হতে মু্ম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। নিজের দক্ষতায় সাফল্যও অর্জন করেছিলেন। কিন্তু স্বজনপোষণ এবং দলবাজির পাল্লায় পড়ে অকালেই হারিয়ে যান এই অভিনেতা। খুব কম বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয় এককালের অন্যতম সেরা এই অভিনেতার।
তিনি নির্মল পাণ্ডে। ‘ব্যান্ডিড কুইন’, ‘দায়রা’, ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’, ‘গডমাদার’-এর মতো সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘দায়রা’ ছবিতে রূপান্তরকামীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সেরা অভিনেতার পুরস্কারও পান। কিন্তু তার পরও সে ভাবে বলিউডে জায়গা করতে পারেননি তিনি। বহিরাগতদের যে যে সমস্যায় পড়তে হয়, তাঁকেও সে সবের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছিল।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর তাঁর মৃত্যুর বিষয়টিও চর্চায় উঠে আসে। তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এক পরিচালককে দোষারোপও করা হয়। যদিও ওই পরিচালক পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নির্মলের জন্ম উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে। আলমোড়ার স্কুলেই তাঁর পড়াশোনা। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মী এবং মা সংসার সামলাতেন। ঠাকুরদা গ্রামে গ্রামে ‘রামলীলা’ শোনাতেন। অবসর পেলেই ঠাকুরদার সঙ্গে নির্মলও চলে যেতেন।
পড়াশোনা শেষ করেই সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজে মন বসত না। কারণ ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল।
পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও শেষে চাকরি ছেড়ে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হন। সেই স্কুলের থিয়েটার দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে যোগ দেন লন্ডনের এক থিয়েটার দলে।
বরাবরই অভিনয়ে অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন। থিয়েটারে তাঁর অভিনয় দেখে ‘ব্যান্ডিড কুইন’-এর জন্য যোগাযোগ করেন পরিচালক শেখর কপূর। ছবির জন্য তিনি থিয়েটারের অভিনেতাই চেয়েছিলেন।
দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন নির্মল। প্রথম ছবিতেই দর্শকদের নজর কেড়ে নেন। তাঁর অভিনয় ভূয়সী প্রশংসিত হয়।
এর পর ‘দায়রা’, ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’, ‘গডমাদার’-এর মতো সমান্তরাল ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ‘হম তুমপে মরতে হ্যায়’-এর মতো বাণিজ্যিক ছবিতেও অভিনয় করে প্রশংসা কুড়োচ্ছিলেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর একটি থিয়েটারের দল ছিল। একটি অভিনয়ের স্কুলও খুলে ফেলেছিলেন তিনি। ছবি পরিচালনাতেও হাত দিয়েছিলেন। অর্থাৎ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সব দিকেই তিনি খুঁটি পুঁতে ফেলেছিলেন।
একজন বহিরাগত হয়েও এতকিছু করাটাই নাকি পছন্দ হয়নি অনেকের। কেরিয়ার নষ্ট করে দিতে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
২০১০ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান নির্মল। তাঁর মৃত্যুর ১০ বছর পর জানা যায়, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মতো তাঁর কেরিয়ারও নষ্ট করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সুশান্তের মৃত্যুর খবর সামনে আসার পরই নির্মলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছিল। তখনই এ সব জানা যায়।
সুশান্তের মৃত্যুর পর পরিচালক সুধীর মিশ্রের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেন এক লেখিকা। টুইটারে পোস্ট করেন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বহিরাগত হয়েও এত উন্নতি পছন্দ হয়নি অনেকের। কেরিয়ার নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই আঘাত সহ্য করতে না পেরেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। যদিও ওই পরিচালক এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছিলেন তখন।