'লকডাউনের পর সবটাই কেমন বদলে গেল...', বলছেন মানালি। ছবি- সংগৃহীত।
সুশান্ত সিংহ রাজপুত জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, রূপোলি পর্দার ঝলমলে অভিনেতাদের জীবন আসলে ‘মেঘে ঢাকা তারা’। যেখানে কান পাতলেই শোনা যায় নীতার আর্তি, ‘আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম....আমি বাঁচতে চাই....আমি বাঁচব!’ লাইভ চ্যাটে এসে সেই কথা খোলা গলায় স্বীকার করে নিলেন ছোট-বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মানালি মনীষা দে। বললেন, ‘‘আমাদেরও যে টাকার দরকার আছে অন্যদের মতো, এটা কাউকে বোঝাতেই পারি না! সবাই ভাবেন আমাদের এত আছে! আমাদের আবার প্রয়োজন কী?’’
একই সঙ্গে ‘শবনম’ মানালি জানাতে ভুললেন না, অভিনেতাদের জীবনে ‘ক্রাইসিস’ শব্দ সবার অজান্তে বহুল ব্যবহৃত। অভিনেতারাও সমস্যায় পড়েন।
পরে অবশ্য সহজ ব্যাখ্যাও করেন কথার, ‘’গ্ল্যামার দুনিয়ায় অন্ধকারের কোনও জায়গা নেই। তাই আমরা সারাক্ষণ নিজেদের ভাল থাকাটাকেই প্রচার করি। সাধারণেরা দেখছেন, আমরা হাসছি, গাইছি, নাচছি। তার মানেই আমরা খুব ভাল আছি। আসলে তা নয়। আমরাও দিনের শেষে আপনাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ।‘’
নকশি কাঁথার একটি দৃশ্যে মানালি। ছবি- সংগৃহীত।
এই জায়গা থেকে মানালির আরও যুক্তি, ‘‘একটা সময় আমাদের নামের আগে ‘স্টার’ শব্দ ব্যবহার করা হত। অভিনেতাদের জীবন লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে উঠত বলে। এখন বদলে গিয়ে ‘অভিনেতা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যাতে অভিনয় আমাদের পেশা, এটা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন।‘’
কেন হঠাৎ এই ধরনের কথা শোনা গেল মানালির মুখে?
৮৪ দিন পরে শুট শুরু জি বাংলার ‘নকশি কাঁথা’র। দারুণ খুশি মানালি কাজ শুরুর আগে পরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবারের সন্ধেয় ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসেছিলেন। তখনই কথায় কথায় জানান, ‘‘দিন গুণছিলাম কবে কাজে ফিরব। ওটাই তো আমাদের ঘরবাড়ি। আর সবাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমরাও নিয়ম মেনে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতেই পারি। কারোরই ঘরে বসে দিন চলে না। রুপোলি পর্দার মানুষদেরও নয়।’’
এর পরেই সেই আড্ডায় জায়গা করে নেন সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত, অভিনেতাদের জীবনের রোজনামচা। কথায় কথায় ধন্যবাদ জানান চিকিৎসকদেরও। যাঁরা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে প্রাণ বাঁচাচ্ছেন সাধারণ মানুষদের।
আরও পড়ুন: পাওয়া গেল সুশান্তের ৫টি ডায়েরি, ঘনিষ্ঠদের সমন পাঠাবে প্রশাসন
আরও পড়ুন: লড়াকু মনোভাবেই টলিউডে বেঁচে আছেন এই তারকারা
অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে অভিনেত্রীর বর্ণনা, ‘‘কলটাইমের সঙ্গেই জানানো হয়েছিল নির্দেশিকাও। তাই আগে ঘুম থেকে উঠেই যে ভাবে চলে যেতাম শুটে, সে সুযোগ এখন নেই। সংক্রমণ রোখার সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে, নিজের খাবার গুছিয়ে তবে ফ্লোরে যাচ্ছি। শুটিং জোনেও এখন নিউ নর্ম্যাল পরিস্থিতি থার্মাল চেকিং, মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি। আড্ডা নেই। দূরত্ব মেনে অভিনয়। সবটাই মেনে এবং মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’’
অভিনয় করতে গিয়ে এক বারও মনে হচ্ছে না, কোনও দৃশ্যে ‘দেব’ ওরফে ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী হাত ধরলে অভিনয় আরও সহজ হত? এখানেও রাখঢাক করেননি ‘শবনম’, ‘‘অনেক সময়েই মনে হয়েছে। কিন্তু এখন ছোঁয়াছুঁয়ির কথা মাথাতেও আনা যাবে না সুরক্ষার খাতিরে। সেভাবেই চিত্রনাট্য লিখছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।’’
আরও একটি বিষয় একই সঙ্গে বিষ্ময় আর মজার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানালির কাছে। কী সেটা?
অভিনেত্রী উবাচ, ‘‘কান্নার জন্য গ্লিসারিন ব্যবহারের আগে বাডস-ও যে স্যানিটাইজড করে নিতে হবে, কোনও দিন ভাবতে পারিনি। এখন সেটাও করতে হচ্ছে!’’
করোনার কল্যাণে আগামী দিনে শবনম খাতুনকে এ রকমই আরও কত কী করতে হবে, কে জানে!