বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিকথায় কৌশিক সেন। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে বার চারেকের সাক্ষাৎ। ওঁকে ঘিরে স্মৃতি তো আছেই। প্রথম তিন বারের সাক্ষাৎ নাটক সংক্রান্ত। শেষ বারের সাক্ষাৎ কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। এর আগে রাজ্য সরকারের নাট্য কমিটিতে ছিলাম আমি। শেষ বারের সাক্ষাৎ ছিল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে। তার আগে নাট্য কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছি। ওই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন রাজ্যের নাট্যব্যক্তিত্বেরাই।
যাই হোক, কুমার রায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আমরা জনা চোদ্দো ওঁর কাছে গিয়েছিলাম। নিজেদের মত জানিয়েছিলাম। বুদ্ধবাবুও আমাদের কাছে ওঁর ভাবনা তুলে ধরেছিলেন। একটা জিনিস সেই সময় লক্ষ করেছিলাম, খাতায়কলমে আমরা তখন আর নাট্য কমিটির সঙ্গে যুক্ত নই, বিরোধী পক্ষ। ওঁর সৌজন্যবোধে কিন্তু ঘাটতি দেখা যায়নি। অবশ্যই আশা করেছিলেন, আমরা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেব। ওঁর মত সমর্থন করব। যদিও সেটা হয়নি। নিশ্চয়ই উনি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু আচরণে প্রকাশ করেননি। আমরাও প্রতি সৌজন্যবোধ দেখিয়েছিলাম।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানে, ওঁর নন্দনে যাতায়াত, সিনেমার প্রতি ভালবাসা কবি ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির লেখা কবিতার অনুবাদ, পাবলো নেরুদার কবিতার প্রতি ভালবাসা। ওঁর এই সংস্কৃতিমনস্কতাকে শ্রদ্ধা করি আমরা। অনেকেই আলোচনা করেন, ওঁর মতো সংস্কৃতিমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আরও দরকার। আমার মতে, মুখ্যমন্ত্রীকে তো আমরা তাঁর সংস্কৃতিমনস্কতা দেখে নির্বাচন করি না। মুখ্যমন্ত্রীকে সংস্কৃতিমনস্ক হতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সেই সব পেরিয়ে বলব, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য খুব ভিন্ন ধরনের মানুষ ছিলেন। আজ বোধ হয় সেটাই মনে করা ভাল। আরও একটি কথা, রাজনীতি এমন একটা বিষয়, যা মানুষকে দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নেয়। যা হয়তো সেই মানুষটি মন থেকে চান না। তার পরেও বলব, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যতটা না রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি সংবেদশীল একজন মানুষ।