Buddhadeb Bhattacharjee Death

পরিচ্ছন্ন, সংবেদনশীল বুদ্ধদেবের মধ্যে রাজনৈতিক চেহারাটা ছিল না

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে সেই সময় মায়া হয়েছিল। উনি রাজনীতির জন্য আড্ডা, নাইট শো-তে ছবি দেখা, যত্রতত্র যাওয়ার স্বাধীনতা ত্যাগ করেছিলেন।

Advertisement

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ১৪:০৮
Share:

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ঘিরে অনেক স্মৃতি। ‘মানুষ’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ‘রাজনীতিবিদ’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য— তাঁর সব সত্তাকেই দেখার সুযোগ হয়েছিল। আজ ওঁকে নিয়ে লিখতে বসে স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। স্যামুয়েল এক বার বলেছিলেন, “রাজনীতি হল সম্ভাব্য ক্ষেত্র। সাধারণ রাজনীতিবিদেরা তাঁদের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা করার চেষ্টা করেন। তার পর পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় নিজের অবস্থান বদল করেন।” ব্যতিক্রম, মহাত্মা গান্ধী কিংবা নেলসল ম্যান্ডেলা। ওঁরা রাজনীতির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বুদ্ধদেবও কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের দেওয়া কথা বা কাজ বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতেন। তার জন্য অনেকে ওঁকে ‘অহংকারী’, ‘নাকউঁচু’ তকমাও দিয়েছেন। খুব অবাক হওয়ার মতো কথা নয়। কারণ, তাঁর মুখে মিছরি ছিল না। স্পষ্ট কথা খুব স্পষ্ট করে বলতেন। সারা ক্ষণ ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে ভাবিত ছিলেন না। ফলে, অনেক অপ্রিয় সত্য তাঁর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। যে কারণে এই তকমা।

Advertisement

‘মানুষ’ বুদ্ধদেব কিন্তু প্রচণ্ড পরিচ্ছন্ন, সংবেদনশীল, সহানুভূতিসম্পন্ন। যা একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে খুব কম থাকে। তখন উনি মুখ্যমন্ত্রী। একবার মহাকরণে ওঁর ঘরে বসে অনেক কথার পর বললেন, “রুদ্রদা, আপনি শ্যামবাজারে যাবেন, আমি বাগবাজারে যাব। চলুন, আপনাকে নামিয়ে দিই।” সে দিন গাড়িতে আসতে আসতেও প্রচুর কথা হয়েছিল। ওঁর কথা শুনতে শুনতে সে দিন খুব মায়া হয়েছিল। বুদ্ধদেব আমার থেকে বয়সে ছোট। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বুঝেছিলাম, আদতে মানুষটা নাইট শো-তে ছবি দেখা, রকে বসে আড্ডা দেওয়া, স্বাধীন ভাবে যত্রতত্রসর্বত্র চলে যাওয়া মিস্ করছেন। এ দিকে রাজনীতিও ওঁর প্রাণ। ফলে, দুই নৌকোয় পা দিয়ে চলতে হয়েছিল তাঁকে। আসলে, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সচেতন ভাবেই হোক বা অবচেতন ভাবে— রাজনৈতিক চেহারাটা ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গের নাট্যচর্চার উন্নতিতেও ওঁর অবদান মনে রাখার মতো। আমরা ওঁর কাছে থিয়েটারের জন্য একটি ভবন করব বলে জমি চেয়েছিলাম। একাধিক বার বলার পর বলেছিলেন, “রুদ্রদা, তাড়া দেবেন না। এ সব কাজ তাড়াহুড়ো করে হয় না। ভাল জমি দেব আপনাদের।” তার পর বিধাননগর গোর্খা ভবনের কাছে, ওকাকুরা ভবনের কাছে ১২ কাঠা জমি দেন আমাদের। নিরিবিলিতে ঘেরা জায়গায় আমাদের ভবন তৈরি হয়েছে। যাতায়াতের যথেষ্ট সুবিধাও সেখানে। আগামী প্রজন্ম যখনই সেই ভবনে পা দেবে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মনে করবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement