ববির পথচলার সবটাই মসৃণ ছিল না। কেরিয়ারে বহু ওঠাপড়ার সাক্ষী তিনি। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
ন’য়ের দশক। সিলভার স্ক্রিনে উত্থান নতুন এক নায়কের। দীর্ঘকায় চেহারা, ঘাড় অবধি লম্বা কোঁকড়া চুল, দীপ্ত চোখ। ববি দেওল। ১৯৯৫ সালে ‘বরসত’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রেখেছিলেন ধর্মেন্দ্র-পুত্র। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে প্রায় ২৫ বছর। এখন সময় অন্যরকম। স্বজনপোষণের তরজায় উত্তপ্ত বলিউড। সেই আবহেই এই বিষয়ে মুখ খুললেন ‘স্টার কিড’ ববি।
সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকে কারণে-অকারণে প্রায় প্রত্যেক তারকাসন্তানকে ‘দোষী’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই ববি বলেছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে বহিরাগতের সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমার বাবা। আমি মনে করি না, বাইরে থেকে এসে এখানে সফল হওয়া খুব সহজ। তবে হিসেব করলে দেখা যায় ইন্ডাস্ট্রিতে বহিরাগতরাই বরাবর বেশি সাফল্য পেয়েছেন। আমার মতে, কখনও হাল ছাড়া উচিত নয়। অভিনেতা হওয়া বেশ কঠিন কাজ।” কিন্তু ধর্মেন্দ্রর পুত্র হওয়ায় কি তিনি নিজে সেই সময় বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকেননি? ববির সহজ ব্যাখ্যা, “ইন্ডাস্ট্রি খুবই নিষ্ঠুর একটা জায়গা। এখানে রূপোর প্লেটে কেউ কাউকে কোনও কিছু সাজিয়ে দেয় না। প্রথম ছবি হয়তো সহজে পাওয়া যেতে পারে। তারপর অভিনেতার কাজটাই তার হয়ে কথা বলে।”
ববির পথচলার সবটাই মসৃণ ছিল না। কেরিয়ারে বহু ওঠাপড়ার সাক্ষী তিনি। তবে তিনি মনে করেন প্রত্যেক অভিনেতার ক্ষেত্রেই বিষয়টা এক। ববির কথায়, “একজন অভিনেতা কী কাজ করছে সেটা বড় কথা নয়। তার কোন কাজটা প্রশংসিত, দিনের শেষে সেটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব ছবিই যে হিট হবে সেই আশ্বাস কেউ দিতে পারবে না।”
ববির কেরিয়ারগ্রাফও তেমনই বলে। শুরুর দিকে ‘সোলজার’, ‘বিচ্ছু’, ‘বাদল’-এর মতো বেশ কিছু সুপারহিট ছবি করেন ববি। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর কেরিয়ারগ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিচ্ছেন বহিরাগতরা। তাঁরই সমসাময়িক শাহরুখ, আমির, অক্ষয়দের ঝুলিতে সেই সময় একাধিক সুপারহিট ছবি। এ দিকে ববির ভাঁড়ার তখন প্রায় খালি। ধীরে ধীরে আবছা হতে থাকে তাঁর উপস্থিতি। বেশকিছু ‘ফ্লপ’ ছবিতে অভিনয় করেন। বাবা এবং দাদার সঙ্গে কাজ করেও সাফল্য অধরা থেকে যায়। তারপর বিরতি। ববি বলেন, “আমার সময় ঠিক যাচ্ছিল না। নিজের যত্ন নেওয়াও বন্ধ করে দিই তখন। আমাকে অগোছাল দেখাতো। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া চলে আসে। আমাকে নিয়ে কথা শুরু হয়। মানুষজন মনে করেন, আমি কাজ পেতে আগ্রহী নই। সেই ধারণা ভাঙতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়।”
অবশেষে সেই ধারণা ভেঙে খোলস ত্যাগ করে ফের নিজেকে মেলে ধরেন ববি। ২০১৮-তে সলমন খানের সঙ্গে ‘রেস ৩’ ছিল তাঁর বড় ব্রেক। নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর ববিকে দেখা যায় ‘হাউসফুল ৪’-এ। ওই ছবিগুলিতে তিনি ছিলেন চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু স্পটলাইট কেড়েছেন সেই সলমন, অক্ষয়রাই। তবে কিছুদিন আগে ‘নেটফ্লিক্স’-এ মুক্তি পায় তাঁর ‘ক্লাস অব ৮৩’। তারপর জি ফাইভের ‘আশ্রম’ সিরিজেও তাঁকে দেখা যায় মূল চরিত্রে। দ্বিতীয় ইনিংসে সফল অভিনেতা ববি। দর্শক পছন্দ করছেন তাঁর কাজকে। নতুন করে সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে শুরু করেছেন অভিনেতা।
আরও পড়ুন: সলমনের হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে, কয়েক বছরেই বিস্মৃত ঐশ্বর্যার ‘লুক অ্যালাইক’
ফেলে আসা সময়ের দিকে তাকিয়ে ববি বলেছেন, “নিজের সন্তানের জন্য ভাল উদাহরণ হতে পারিনি। তবে আমি বুঝেছি, একবার সফল হয়েও ফের নতুন করে সফল হওয়া যায়। দরকার শুধু পরিশ্রমের। আমি আমার জীবনের সেই অধ্যায়ে আর ফিরে যেতে চাই না।” সময়ের জল তারপর অনেকটা গড়িয়েছে। ববি এখন অনেক পরিণত। বলছেন, নিজেকে বুঝতে শিখেছেন তিনি। তাই নিজেকে দেখে আর করুণা হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ার মিম, ‘ডিজে ববি’ ট্রোল এখন তাঁর হাসির খোরাক। ববির জীবনে এখন নতুন বসন্ত। নিজেকে ভালবাসার বসন্ত।
আরও পড়ুন: ফের ‘রবীন্দ্র আমেজ’-এ অর্জুন, মিমির বদলে সফরসঙ্গী দর্শনা