আসিফ শেখ। জনপ্রিয় হিন্দি সিরিয়াল ‘ভাবিজি ঘর পর হ্যায়’-র বিভূতি নারায়ণ মিশ্র। তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। তিনি হিন্দি সিরিয়ালের ‘অনিল কপূর’।
১৯৬৪-এ নয়াদিল্লিতে জন্ম আসিফের। দিল্লির সেন্ট অ্যান্টনি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন।
স্কুল থেকে বেরিয়ে দিল্লির খালসা কলেজে ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা। অন্য অভিনেতার মতো ছোট থেকে অভিনয়ের প্রতি একেবারেই ঝোঁক ছিল না তাঁর।
বরং চেয়েছিলেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট করে চাকরি করতে। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য বদলে যায় কলেজ জীবনে।
কলেজে তাঁর বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই থিয়েটার করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে থিয়েটার দেখতে দেখতে একটা ভাল লাগা তৈরি হয় তাঁর।
তার পর কলেজের থিয়েটার দলে যোগও দেন। ছেলে থিয়েটার করবে তা একেবারেই পছন্দ ছিল না তাঁর মা-বাবার।
কলেজ পাশ করে তাই হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন আসিফ। কিন্তু মন তখন থিয়েটারে পড়ে। তাই টাকা দিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হলেও কোর্স সম্পূর্ণ করেননি তিনি। থিয়েটারের জন্য মাঝ পথেই পড়া ছেড়ে দেন। এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তিও হয়।
সেটা ছিল ১৯৮৪ সাল। পরিচালক পি কুমার বসুদেব ভারতের প্রথম সিরিয়াল ড্রামা সিরিজ ‘হম লোগ’ বানাচ্ছেন তখন। আসিফের বাবা কাগজে তার অডিশনের বিজ্ঞাপন দেখে আসিফকে জানান।
আসিফের বাবার শর্ত ছিল যদি অডিশনে আসিফ সুযোগ পান তাহলে তিনি ইচ্ছামতো অভিনয়কেই কেরিয়ার হিসাবে বেছে নেবেন। আর যদি তা না হয়, অর্থাৎ অডিশনে আসিফ যদি বাতিল হয়ে যান, তাহলে তাঁকে অভিনয়ের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে।
শর্তে রাজি হয়ে যান আসিফ। আর অডিশনে তাঁকে সিরিয়ালের প্রিন্স অজয় সিংহের চরিত্রের জন্য বাছাইও করে নেওয়া হয়। বাবার কাছে নিজেকে প্রমাণ করে মুম্বই রওনা দেন তিনি। কিন্তু মুম্বই পৌঁছনোর পর সমস্যায় পড়েন তিনি।
মুম্বইয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। এক সময় তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে টাকার জন্য নিজের সোনার চেন বেচতে হয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও কোনও সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। এমনকী দূরদর্শনে টিভি নিউজ রিডারের অডিশন থেকেও প্রত্যাখ্যাত হন।
বাধ্য হয়ে ফের নিজের জন্মস্থান দিল্লিতে ফিরে যান। এর কয়েক বছর পর ১৯৮৮ সালে তিনি ‘রামা ও রামা’ ফিল্মে ডেবিউ করেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একটার পর একটা ফিল্মে অফার আসে তাঁর কাছে।
কিন্তু মুখ্য চরিত্রে তিনি সে ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তার উপর সিরিয়াল থেকে শাহরুখ, সলমনের মতো অভিনেতারা ফিল্মে আসতে শুরু করেছিলেন। ক্রমে আসিফ প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান।
আসিফ সিদ্ধান্ত নেন, কেরিয়ারে কিছু বদল আনার। তিনি ফিল্ম থেকে সরে টিভি সিরিয়ালে নিজের জায়গা শক্ত করতে শুরু করেন।
১৯৯৯ সালে সিরিয়াল ‘ইয়েস বস’ জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাঁকে। তখন থেকে আজও টেলিভিশন সিরিজে আসিফ নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। ‘ভাবিজি ঘর পর হ্যায়’ কমেডি সিরিয়ালেও তাঁকে খুব পছন্দ করেছেন দর্শক।
তাঁর ৩৬ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে অনেক চড়াই উতরাই এসেছে। সব সামলে এখনও সমান ভাবে উজ্জ্বল আসিফ। আসিফকে দেখে কেউ বুঝবেনও না যে তাঁর ৫৫ বছর বয়স। দর্শকেরা কাছে তাই তিনি সিরিয়ালের ‘অনিল কপূর’।