পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
চুরির অভিযোগ চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে । অভিযোগ এনেছেন সুজাতা চৌধুরী নামক মহিলা। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রাক্তনী তিনি। নিজের একটি চিত্রনাট্য সংস্থাও রয়েছে তাঁর। নাম ‘বোহো বায়োস্কোপ’।
ঠিক কী ঘটেছে?
একটি ফেসবুক পোস্টে সুজাতা দাবি করেন, ২০১৮ সালে কলেজ পাশ করার পর তিনি কলকাতা আসেন। ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্য তিনি যোগাযোগ করেছিলেন পদ্মনাভর সঙ্গে। তখন পদ্মনাভ তাঁকে এই ফ্রেডরিক ডিউরেনম্যাটের ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’ গল্পটি শুনিয়েছিলেন। সুজাতার সেই গল্পটি পছন্দ হলে তাঁরা একসঙ্গে কাজের জন্য রাজি হয়ে যান। এর পরেই সুজাতার সঙ্গে কাজের চুক্তি সই করেন পদ্মনাভ। ছবির নাম রাখা হয় ‘জলসাঘর’।
ফ্রেডরিকের বইটি ভারতে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে আমেরিকা থেকে দুটি কপি আনানো হয়। পাশাপাশি জুরিখে ফ্রেডরিকের স্বত্ব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন সুজাতা। সেখান থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। সেই সময় বেশ কয়েকজন অভিনেতাকে নিজের ছবির গল্প শুনিয়েছিলেন সুজাতা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, কৌশিক সেন, শিশির শর্মা, বিনয় পাঠক এবং শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
ইতিমধ্যে পদ্মনাভ এবং কমলেশ্বর তাঁদের দলের জন্য একটি নাটক করেন। সুজাতার দাবি, সেই নাটকের গল্প হুবহু মিলে যায় তাঁর ছবির চিত্রনাট্যের সঙ্গে। এ বিষয়ে পদ্মনাভকে প্রশ্ন করলে তিনি সুজাতাকে জানান, ছোট একটি অনুষ্ঠানে এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। তাই চিন্তার কিছু নেই। ভবিষ্যতে যাতে এ ভাবে আর চুক্তি লঙ্ঘিত না হয়, সেই বিষয়ে পদ্মনাভকে সাবধানও করেছিলেন সুজাতা। এর পরে নাকি কমলেশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সুজাতা এবং জানতে পারেন আরও অনেক বার সেই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। দেব থেকে রাজ চক্রবর্তী, প্রত্যেকেই সেই নাটক দেখেছেন বলে দাবি করছেন সুজাতা।
২০১৯ সালে চিত্রনাট্যকারদের সংগঠনেও ছবির চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলেন সুজাতা। পদ্মনাভর হয়ে তাঁর স্ত্রী লোপামুদ্রা দাশগুপ্তর সই করা চুক্তিপত্রও রয়েছে সুজাতার কাছে । আবার ইতিমধ্যেই একই গল্পের উপর ভিত্তি করে রুমি জাফরি তৈরি করেন ‘চেহরে’। এই ছবিতে দেখা যাবে অমিতাভ বচ্চন, ইমরান হাশমির মতো বলিউডের প্রথম সারির মুখ। অথচ জুরিখে আবারও যোগাযোগ করে সুজাতা জানতে পারেন সেই গল্পের স্বত্ব কাউকেই বিক্রি করা হয়নি।
এই ধাক্কা সামলে ওঠার পরেই আরও বড় ধাক্কা। এর পরেই এক বন্ধুর মারফৎ নতুন বাংলা ছবি ‘অনুসন্ধান’-এর ট্রেলর দেখেন সুজাতা। এই ছবিটির পরিচালক কমলেশ্বর। সুজাতার দাবি, তাঁর ছবির চিত্রনাট্যে কিছু সামান্য বদল ঘটিয়ে তাঁকে না জানিয়েই এই ছবি তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে কমলেশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পদ্মনাভর সঙ্গে তাঁর ছবির কোনও সম্পর্ক নেই। এই ছবির পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার দুই-ই কমলেশ্বর। তিনি বলেন, “একটা ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই তার নেপথ্য কাহিনী নিয়ে মানুষের কতো জল্পনা। আমার ছবির স্ক্রিপ্ট সম্পূর্ণ আলাদা। তিনজন লেখকের গল্পের উপর ভিত্তি করে ছবির গল্প লিখেছি। কে কার গল্প থেকে চিত্রনাট্য লিখেছে, সেটা জানা আমার দায়িত্ব নয়। চাঁদের পাহাড় নিয়েও অনেকে অনেক চিত্রনাট্য লিখেছেন। কিন্তু ছবিটা তো শেষমেশ আমিই তৈরি করেছি।” সুজাতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন কমলেশ্বর।