(বাঁ দিকে) রাহুল দত্ত। ‘পিপ্পা’ ছবির পোস্টার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা কাটতে চলেছে। কাজী নজরুল ইসলামের সুর বিকৃত করেছেন অভিযোগ এ আর রহমানের বিরুদ্ধে। সমাজমাধ্যম তোলপাড়। কারও প্রশ্ন, রহমান এমন গর্হিত কাজ করলেন কী ভাবে। অন্য পক্ষের প্রশ্ন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির সুর কি আদৌ ‘মিউজ়িক মায়েস্ত্রো’ রহমানেরই মস্তিষ্কপ্রসূত?
কী ভাবে এই গানটি রেকর্ড করা হয়? কী কী পদ্ধতি ছিল সেখানে? খোঁজ নিয়ে বোঝার চেষ্টা করল আনন্দবাজার অনলাইন। জানা যাচ্ছে ‘পিপ্পা’ ছবির এই গানে একাধিক বাঙালি শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাহুল দত্ত, তীর্থ ভট্টাচার্য, পীযূষ দাশ, শালিনী মুখোপাধ্যায়, দিলাশা চৌধুরী, শ্রয়ী পাল প্রমুখ। তবে মূল উদ্যোগ ছিল রাহুলের।
রাহুল বললেন, ২০২১ সালে হঠাৎ এক রাতে তাঁর কাছে রহমানের টিমের থেকে ফোন আসে। এটা রহমানের সঙ্গে শিল্পীর তৃতীয় কাজ। রাহুল বললেন, ‘‘বলা হয় সেই রাতেই গানটা রেকর্ড করতে হবে। সেই মতো আমি বাকিদের জোগাড় করি। তখনও জানতাম না গানটা কী ভাবে কোথায় ব্যবহার করা হবে।’’ তার পর রহমানের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন রাহুল। গভীর রাতে শুরু হয় রেকর্ডিং। রহমান কি আগে সুর করে পাঠিয়েছিলেন? রাহুল সে কথা স্বীকার করে নিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের কাছে আগে সুর করে পাঠানো হয়েছিল। আমরা কিছু জানতাম না। কোন ছবিতে ব্যবহার করা হবে সেটাও জানতাম না।’’
রাহুল জানালেন, রেকর্ডিংয়ের সময় তাঁদের সঙ্গে রহমানের টিমের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি, ছবির প্রযোজনা সংস্থার তরফে রাহুলের কাছে ফোন আসে। তার পর তিনি জানতে পারেন কোথায় এবং কী ভাবে গানটা ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সুর জানার পর রাহুল প্রতিবাদ করলেন না কেন? শিল্পী বললেন, ‘‘তখন অত কিছু ভাবিনি। গায়কের কাজ গান গাওয়া। আমরা সেটাই করেছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো হতেই পারে। সত্যিই বলছি অত কিছু ভাবিনি। বাঙালি ছেলেমেয়েদের রহমানের মতো শিল্পী কোরাসে ব্যবহার করতে চেয়েছেন এটাই আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় মনে হয়েছিল।’’
গত ৮ নভেম্বর ফেসবুকে এই গানটি নিয়ে তিনি যে গর্বিত সে কথা লিখেছিলেন রাহুল। তখনও বিতর্ক এতটা দানা বাঁধেনি। এখন কী মনে হচ্ছে তাঁর? রাহুল বললেন, ‘‘তখন কিন্তু বহু শিল্পী আমাকে মেসেজ করে কমেন্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এ রকমও অনেকে লিখছেন, আমরা নাকি এই কাজটা করে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দিয়েছি! তাঁরা অবশ্য আমাদের কোনও শুভেচ্ছাবার্তা দেননি।’’
এই গান মুক্তির পর রহমানকে সমাজমাধ্যমে যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে তা মেনে নিতে পারছেন না রাহুল। তিনি বললেন, ‘‘যে কোনও কাজেরই ভাল-খারাপ দুই দিকই থাকে। কিন্তু রহমানের সঙ্গীতের জ্ঞান নিয়ে যদি এখন প্রশ্ন ওঠে, তা হলে সেটা দুঃখজনক।’’ তবে এই গানটি ভাল না কি খারাপ, তা নিয়ে আলাদা ভাবে কোনও কিছু বলতে নারাজ রাহুল। বললেন, ‘‘আমি এক জন শিল্পী। রহমান আমার গুরু। তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ আমার কাছে স্বপ্নপূরণ। আর কিছু ভাবতে চাই না।’’