Indraneil Sengupta

ক্যানসারের অলিগলিতে টানটান রহস্যের খোঁজে ওয়েব সিরিজ ‘কর্কট রোগ’

বাংলা ও হিন্দি, দুই ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত এই মেডিক্যাল থ্রিলারের স্পেশাল স্ক্রিনিং হয়ে গেল সোমবার, বালিগঞ্জের একটি মাল্টিপ্লেক্সে। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা। ছিলেন মূল গল্প ‘কর্কট ক্রান্তি’র লেখক ইন্দ্রনীল সান্যালও।

Advertisement

পরমা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:২৪
Share:

জি ফাইভ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ ‘কর্কট রোগ’-এর গল্প।

রোগটার নাম ক্যানসার। এই মারণব্যাধিতে আক্রান্তরাই খুন হয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। আর তার কিনারা করতে গিয়েই বেরিয়ে পড়া, কী ভাবে ক্যানসারের মতোই সমাজের স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে অপরাধ প্রবণতা। থাবা বসাচ্ছে খাস চিকিৎসা জগতের অন্দরে। তারই বুনোটে এগিয়েছে জি ফাইভ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ ‘কর্কট রোগ’-এর গল্প। বাংলা ও হিন্দি, দুই ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত এই মেডিক্যাল থ্রিলারের স্পেশাল স্ক্রিনিং হয়ে গেল সোমবার, বালিগঞ্জের একটি মাল্টিপ্লেক্সে। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা। ছিলেন মূল গল্প ‘কর্কট ক্রান্তি’র লেখক ইন্দ্রনীল সান্যালও।

Advertisement

এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, অটোপ্সি সার্জেন বিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্তন ক্যানসারের শিকার। সদ্য অস্ত্রোপচার করিয়ে তুমুল অবসাদ-হতাশার সঙ্গে যুঝতে থাকা বিয়াস কাজের জগতে ফেরেন। নতুন করে দক্ষ হাতে ময়নাতদন্তে মনোযোগ দিতে গিয়েই খেয়াল করেন, একের পর এক ঘটনায় শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসা দেহগুলির প্রত্যেকটিতেই ক্যানসারের থাবা বসানোর চিহ্ন রয়েছে। আপাত ভাবে যোগাযোগহীন এই প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা কি তবে একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কযুক্ত? উত্তর খুঁজতে মরিয়া বিয়াসের সঙ্গী হন তরুণ পুলিশ অফিসার বরুণ সরকার। রহস্যের জাল কেটে দিনের আলোয় বেরিয়ে আসে চেনা জগতেরই এক অন্ধকার চেহারা। কী ভাবে? জবাব মিলবে ওয়েব সিরিজেই।

বিয়াসের ভূমিকায় চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী স্তন ক্যানসারের সঙ্গে লড়ার হতাশা-অবসাদে একেবারে জীবন্ত। শরীরের পূর্ণতা হারানোর দুঃখ কুরে কুরে খাওয়া অস্থির রাগের মুহূর্ত থেকে কর্তব্যবোধে অবিচল চিকিৎসকের সত্যিটা খুঁজে বার করার জেদ, অনায়াস অভিনয়ে নিপুণ ভাবে বিয়াসকে রূপ দিয়েছেন চিত্রাঙ্গদা। বিয়াসের প্রেমিক সৈকতের ভূমিকায় যোগ্য সঙ্গত করে গিয়েছেন টেলিপর্দার পরিচিত মুখ সুদীপ সরকার। মেধাবী চিকিৎসক, ভালবাসার মানুষকে আদরে-যত্নে-সহমর্মিতায় আগলে রাখা সৈকতও তাই নজর কাড়েন যথেষ্ট। সাহসী ও দক্ষ অফিসার বরুণের ভূমিকায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সাবলীল অভিনয়ও দাগ কাটে গল্পের অলিগলি জুড়ে। তবে তাঁর চরিত্রকে হয়তো বা আরও খানিকটা জায়গা দেওয়া যেতে পারত।পার্শ্বচরিত্রে রাজেশ শর্মা স্বল্প পরিসরেও জাত চিনিয়ে যান স্বভাবসিদ্ধ বলিষ্ঠ অভিনয়ে। ছোট্ট একটি চরিত্র ঋকের ভূমিকায় আর্য দাশগুপ্তকেও আলাদা করে চোখে পড়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোন দিকে মোড় নেবে ত্রিকোণ সম্পর্ক? আজ থেকে নয়া ধারাবাহিক ‘ধ্রুবতারা’

একসঙ্গে ইন্দ্রনীল ও চিত্রাঙ্গদা নতুন ওয়েব সিরিজের হাত ধরে

তবে অন্তত প্রথম দু’-তিনটি পর্বে গল্প বলার ভঙ্গিবেশ খানিকটাই এলোমেলো। হয়তো বা সুপরিকল্পিত ভাবেই এমন এডিটিংয়ে গল্পের সুতো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক। সিরিজের মাঝের দিকে খানিকটা গতি পাওয়ার পাশাপাশি সেই টুকরো টুকরো সুতোয় এগিয়েছে গল্প বোনার কাজ। তবে থ্রিলার হিসেবে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্য ধরে রাখতে সফল বলাই যায় ‘কর্কট রোগ’-কে। আর তাতে নিঃসন্দেহে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে র‍্যালফ ডেনকার এবং কনিষ্ক সরকারের দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও।

মেডিক্যাল থ্রিলার ঘরানার এই নতুন ওয়েব সিরিজের সফলতায় খুশি পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়: “শেষ পর্যন্ত থ্রিল ধরে রাখতে পারাটাই থ্রিলারের সাফল্য। ‘কর্কট রোগ’ সেটা করতে পেরেছে। মেডিক্যাল থ্রিলার হিসেবে চিকিৎসা জগৎ থেকেও আদায় করে নিয়েছে বাড়তি দর্শক। আর বিশেষ স্ক্রিনিং-এ আসা মানুষ সিরিজের বাকিটুকু দেখতে উৎসাহী হচ্ছেন যখন, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।’’

আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেনে পরিচালকের আত্মীয়াকে হেনস্থা মত্ত যুবকদের, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মিলল সাহায্য

এই ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে ইদানীংকার জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক, পেশায় চিকিৎসক ইন্দ্রনীল সান্যালের গল্প ‘কর্কট ক্রান্তি’র উপর ভিত্তি করে। নিজের গল্পের চিত্রায়ন কেমন লাগল লেখকের? ‘‘মূল গল্প যারই হোক, ছবি হতে যাওয়ার পর তাতে লেখকের আর কোনও বক্তব্য থাকার কথা নয়। লেখা ও ছবি দুটো একেবারে আলাদা মাধ্যম, যার অনুভূতিও আলাদা রকমের। তবে মূল গল্পের লেখক হিসেবে আমার প্রত্যাশা পূরণ করেছে এই ওয়েব সিরিজ।’’

আর উপস্থিত অভিনেতারা? চিত্রাঙ্গদার কথায় উঠে এসেছে ক্যানসার-জয়ী অটোপ্সি সার্জেনের চরিত্র নিয়ে তাঁর রিসার্চ, প্রস্তুতির কথা। বেশ কিছুদিন আগে স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে চরিত্রের গ্রাফ অনুযায়ী তাকে ফুটিয়ে তোলার গল্প বলেছেন মেগা সিরিয়ালের চেনা মুখ সুদীপও। আর উজ্জ্বল কমলা রঙা ড্রেসে নজরকাড়া চিত্রাঙ্গদাকে দেখিয়ে দিয়ে হেসে ফেলেছেন সাদা শার্ট, অ্যাশ জ্যাকেটের স্মার্টনেসে ঝলমলে ইন্দ্রনীল,‘‘এটা তো ওরই গল্প। আমি কিন্তু শুধু পাশে পাশে থেকেছি। তবে চরিত্রটা বেশ পছন্দের!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement