গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আব্রাহাম লিঙ্কন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি। ১৮৬১ সালে এই পদ পেয়েছিলেন তিনি। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল হত্যা করা হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে। ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে তখন নাটক দেখছিলেন লিঙ্কন। জন উইলকেস বুথ নামে প্রখ্যাত অভিনেতা গুলি করে হত্যা করেন তাঁকে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে এক গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হন লিঙ্কন। তাঁকে ঘিরে অজস্র কিংবদন্তি, যার মধ্যে তাঁর ভ্যাম্পায়ার শিকারের মতো ঘটনাও রয়েছে।
লিঙ্কনের যৌন আত্মপরিচয় প্রসঙ্গে বিস্তর আলোচনা হয়েছে ইতিপূর্বে। বহু বছর ধরে ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিষয়ে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে লিঙ্কনের রাষ্ট্রনীতি, ভ্যাম্পায়ার সংযোগের ঊর্ধ্বে একটাই প্রশ্ন চর্চায়, লিঙ্কন কি সমকামী ছিলেন? অবশেষে উত্তর মিলবে। ‘লাভার অফ মেন: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ আব্রাহাম লিঙ্কন’ তথ্যচিত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির যৌন আত্মপরিচয় প্রসঙ্গে নানা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিচালক শন পিটারসন। এই তথ্যচিত্র মোতাবেক, লিঙ্কন সমকামী ছিলেন। তথ্যচিত্রে এমন কিছু অপ্রকাশিত ছবি এবং চিঠি দেখানো হয়েছে, যা থেকে কার্যত এটা স্পষ্ট যে, একাধিক পুরুষের সঙ্গে লিঙ্কনের রোম্যান্টিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর সমকামী যৌনতার উষ্ণ মুহূর্তের বিবরণীও মিলেছে কিছু নথিতে। বিশ্বের তাবড় লিঙ্কন গবেষক বহু বছর ধরে গবেষণার পরে এই নথি উদ্ধার করেছেন।
পরিচালকের দাবি, স্পিড নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রায় চার বছর প্রেমপত্র আদানপ্রদান করেছিলেন লিঙ্কন। যৌবনে একসঙ্গে লম্বা সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। তথ্যচিত্রের ঝলক জানান দিচ্ছে, একটি চিঠিতে লিঙ্কন লিখেছিলেন, “প্রিয় স্পিড, তোমাকে ছাড়া আমি একেবারে একা হয়ে যাব। আমি তোমার ভালবাসা, লিঙ্কন।” অনুমান করা হচ্ছে, তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগের ঘটনা এটি। অন্য দিকে, এক সেনার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে লিপ্ত হন লিঙ্কন। বাড়ির মহিলা সদস্যের অনুপস্থিতিতে একই বিছানায় ঘুমোতেন বা রাত কাটাতেন তাঁরা। রাষ্ট্রপতির রাতপোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা মিলেছিল সেই ব্যক্তির। সমস্ত প্রমাণ পর পর সাজালে মালুম হচ্ছে, লিঙ্কন সমকামী ছিলেন।
তবে অনুমান, গোড়া থেকেই সমকামী ছিলেন না লিঙ্কন। অন্তত ইতিহাসের পাতা থেকে এমনই অনুমান করা হয়। লিঙ্কনের প্রথম প্রেম অ্যান রলেজ। কিন্তু সেই সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় অ্যানের। এর পরে লিঙ্কনের আরও প্রেমের কথা শোনা যায়, যদিও তা অস্পষ্ট। পরবর্তী কালে ১৮৪২ সালে মেরি টডের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন লিঙ্কন। তাঁদের চার সন্তানও হয়। তবে তাঁদের দাম্পত্য জীবনকে কেন্দ্র করেও বার বার বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে। তাঁদের বৈবাহিক জীবনকে ‘দুর্বিষহ’ আখ্যা দিয়েছেন একাধিক লিঙ্কন গবেষক। সেই সময় আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের স্ত্রী থাকা আবশ্যক, এই ধারণা প্রচলিত ছিল। সেই কারণেই কি বৈবাহিক জীবনযাপন মেনে নিয়েছিলেন লিঙ্কন? উঠছে প্রশ্ন। তা ছাড়া সেই সময় সমকামিতাকে ‘মানসিক অসুস্থতা’ হিসাবে দেখা হত। শুধু তা-ই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবেও গণ্য করা হত। তাই নিজের যৌন অভিমুখ গোপনে রেখেছিলেন লিঙ্কন।
তথ্যচিত্র নির্মাতাদের তরফে জানানো হয়েছে, আমেরিকার ইতিহাসের একটি অজানা অধ্যায় ও তার নানা প্রতিবন্ধকতার দিক তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “মানুষের যৌন আত্মপরিচয় নিয়ে কেন আমরা সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি রাখি, সেই ভাবনা উঁকি দেবে দর্শকের মনে। শুধুই লিঙ্গের ভূমিকা বা যৌনতা সম্পর্কে নয়, বরং এই তথ্যচিত্র আমেরিকান সমাজের অন্তর্নিহিত অসহিষ্ণুতার প্রতি এক অনুসন্ধান।” ঊনবিংশ শতাব্দী আর বর্তমান সময়ের মানুষের যৌন আত্মপরিচয় প্রকাশের ফারাক তুলে ধরা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে ‘লাভার অফ মেন’। লিঙ্কনের সমকামিতা প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ‘সমকামী ভ্যাম্পায়ার’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে শিরোনামে এসেছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। ওয়াশিংটনে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতির মোমের মূর্তি গলে গিয়ে তার আকার নষ্ট হয়ে গিয়েছে, অত্যধিক তাপের প্রভাবে।