এই প্রথম দুই বাংলার সাহিত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, নাট্য-আঙিনার বিশিষ্ট জনেরা সমবেত হলেন ভাষার জন্য, ভাষা-শহিদের জন্য, উনিশের জন্য। ১৯৬১-র ১৯ মে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে শিলচর রেলষ্টেশনে এগারোজন মানুষ পুলিশের নির্মম গুলিতে মারা গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র মাতৃভাষায় অধিকারের দাবিতে আরও কয়েকজন প্রতিবাদী যুবক-যুবতীর যে মৃত্যু ঘটেছিল সেদিন, তাঁদের কথা মনে রেখেছি আমরা ক’জন? অথচ অসমের এই ভাষা যুদ্ধে ভাষা শহিদের সংখ্যা বাংলাদেশের একুশের আন্দোলনকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। দুই বাংলাতেই এই কলঙ্কিত অধ্যায় নিয়ে সকলেই নীরব। সেই নীরবতা ভাঙলেন শিলচরেরই মানুষ কালিকাপ্রসাদ। ভাষার আবেগ নিয়ে তৈরি হল এক সংকলন। নাম ‘উনিশের ডাক’। প্রকাশনায় পিকাসো এন্টারটেনমেন্ট আর শিলচর ভাষা শহিদ স্টেশন সমিতি।
‘‘এই সংকলন কেবলমাত্র একটা সিডি নয়। বা আমরা কোনও একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতা পড়লাম, গান গাইলাম এমনটাও নয়। ১৯-মে নিয়ে সাংস্কৃতিক জগতে কোনও সাড়াশব্দই ছিল না। এই কাজ আমার অকাল পিতৃ-তর্পণ। মায়ের মুখ থেকে মাতৃভাষা পেয়েছি বটে, কিন্তু এই ভাষায় আমি পড়ালেখা করতে পারতাম না যদি না ৬১-র ১৯ মে আমার মাতৃভাষার অধিকারকে রক্ষা করার জন্য ১১ জন মানুষ আত্মবলিদান না দিতেন। আমি এক অর্থে উনিশের সন্তান,’’ বললেন ‘দোহার’-এর কালিকাপ্রসাদ। তিনি একাধারে এই সংকলনের সংকলক ও পরিচালক।
২১টি ট্র্যাকে ৭৫ মিনিটের এই সংকলনে কলম ধরেছেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যেন না ভুলি সেই দিনটার কথা। যেদিন বাঙালিরই একটা অংশ মৃত্যুবরণ করেছিল বাংলা ভাষারই মর্যাদা রক্ষার দায় কাঁধে নিয়ে।’’ দেবশঙ্কর হালদার পড়েছেন শঙ্খ ঘোষের ‘দশক’। ১৯ মে ভাষা-শহিদের জন্য জয় গোস্বামী পড়েছেন ‘শিলচর ৮ জানুয়ারি’ কবিতাটি। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এই প্রথম অতুলপ্রসাদ আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাইরে গিয়ে রেকর্ড করেছেন বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের গান ‘ঘুমের দেশে ঘুম পাড়াতে’। অর্ণা শীল-এর কথায় শ্রীকান্ত আচার্য সুর বেঁধে গেয়েছেন ‘আমি সেই দেশ খুঁজেছি কত।’ আবার শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর কবিতায় সুর করেছেন জয় সরকার। আর সেই গান গেয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র। পরমব্রত চট্টেপাধ্যায়কে এবার পাওয়া যাবে এক অন্য মেজাজে। মণীশ ঘটকের কবিতা পড়েছেন তিনি। মাতৃভাষার অধিকারের কথা বলতে গিয়ে পরিচালক গৌতম ঘোষ এই সংকলনের জন্য বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথা। শ্রাবণী সেন গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পর্যায়ের গান।
‘দোহার’ এই অ্যালবামে গেয়েছে ১৯ মে-র সেই অবিস্মরণীয় গান: ‘শোনো ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই...’। আজও ১৯ মে মানেই বরাক উপত্যকার আকাশে-বাতাসে এই গান। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার চেয়ে আজও মানুষ লড়াই করছে। দুই বাংলার মানুষ এই সংকলনে যে ভাবে নিজেদের প্রকাশ করেছেন, তা নিয়েই একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র ভাবছেন কালিকাপ্রসাদ। ‘উনিশের ডাকে’ মিশে যাবে বরাক উপত্যকার মৃত্যুমিছিল আর আজকের দুই বাংলার ভাষার আবেগ।
আনাচে কানাচে
গ্ল্যাম-গার্ল: ডাব্বু রত্নানির ‘বং-ক্যালেন্ডার’-এ ঋতুপর্ণা।