মা হওয়া মুখের কথা নয়। এই প্রবাদ শুনে আসছি সেই ছোটবেলা থেকেই। আর এই সিরিজ় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। পেরেন্টিংয়ের ক্লাস করতে চাইলে এই সিরিজ় আদর্শ। সন্তানকে কী ভাবে বড় করবেন, কী শেখাবেন, সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন এবং কী করবেন না, দত্তক সন্তানকে কী ভাবে বোঝাবেন... পেরেন্টিং সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর আছে ‘মেন্টালহুড’-এ। কিন্তু তা ক্লাসরুমের সাবজেক্টের মতোই নীরস। বোল্ড লাইনে দাগিয়ে দেওয়া সমস্যা ও তার সমাধান। যেন পরীক্ষায় বসার আগের মেড ইজ়ি। সিরিজ়ের থ্রিল পাওয়া গেল না।
কানপুর থেকে মুম্বইয়ে সপরিবার শিফট করেছে মীরা শর্মা (করিশ্মা কপূর)। মীরার শাশুড়ির হাত থেকে রেহাই পেতেই এই ব্যবস্থা। মুম্বইয়ে এক এলিট স্কুলে ভর্তি করেছে সন্তানদের। কিন্তু বড় স্কুলের আদবকায়দা শিখতে শিখতে ক্লান্ত মিস কানপুর করিশ্মা। তা-ও সেই স্কুলেই জুটে যায় কিছু বন্ধু। তাঁদের মধ্যে কেউ সিঙ্গল পেরেন্ট, কারও স্বামী সমকামী, কারও সন্তান দত্তক নেওয়া। বিভিন্ন ধরনের পেরেন্টদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, যাতে অনেকেই সিরিজ়টির সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেন। কিন্তু সেই গ্রুপ এতই এলিট যে কানেক্ট করাও দুষ্কর।
প্রত্যেকটি এপিসোড ভাগ করা হয়েছে পেরেন্টিংয়ের সমস্যাকে কেন্দ্রে রেখে। যেমন, কোনওটা স্কুলে বুলি, তো কোনও এপিসোড সেক্স এডুকেশনের উপরে, কোনওটা আবার সন্তানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত। ঠিক পাঠ্যপুস্তকের চ্যাপ্টার ভাগ করার মতো। আর পেরেন্টিং করা যে সহজ নয়, কখনও তা প্রোটেক্টিভ, কখনও আবার প্যারানয়েড। পেরেন্টহুডের এই চাপানউতোর নিয়ে ‘মেন্টালমম’ ব্লগ লিখতে শুরু করে মীরা। সারা দিন সন্তানদের জন্য খাটাখাটনির পরেও যখন সে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চায়, তখনও তার মায়ের সত্তাই কাজ করে।
আরও পড়ুন: করোনা-যুদ্ধে জয়ীদের সাক্ষাৎকার নিলেন কার্তিক আরিয়ান, উত্তর পেলেন কিছু মিথেরও
সন্ধ্যা মৃদুল, তিলোত্তমা সোম, শিল্পা শুক্ল, করিশ্মা কপূরের মতো অভিনেতারা থাকলেও সিরিজ়ের জন্য তা তেমন সহায়ক হয়নি। কিছু পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতাদের উপস্থিতিও বেদনাদায়ক। বিশেষত সন্ধ্যা মৃদুলের স্বামীর চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, সারা সিরিজ় তিনি শুধু রাগত দৃষ্টি নিয়ে কেন ঘুরে বেড়ালেন বোঝা গেল না।
তা হলে এই সিরিজ দেখবেন কেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন। তার উত্তর আছে সিরিজটির ছত্রে ছত্রে। যে দিন আপনার সন্তান স্কুলে মার খেয়ে আসে বা পরীক্ষায় কিছু লিখতে না পেরে বাড়ি ফেরে, সে দিন ঠিক কেমন ফিল করেন? ইন্ডিভিজুয়াল আইডেন্টিটি আর মা হওয়ার টানাপড়েন খুব সুন্দর তুলে ধরেছে সিরিজ়টি। মীরার (করিশ্মা) মুখের সংলাপ, ‘মায়েদের ভুল করারও পারমিশনও নেই’ বারবার ধাক্কা দেয় মাতৃত্বে। সব মা-ই কি পারফেক্ট? কারও কোনও ভুল ত্রুটি থাকতে পারে না? মায়েরা মুখ খারাপ করে না? মা বলে কি আনন্দ করবে না? সন্তানের জন্য চিন্তাও প্রকাশ করতে পারবে না বহির্জগতে? তা হলেই সকলে ছুটে আসবে তাঁকে ‘ন্যাকা’র তকমা দিতে! এই প্রত্যেকটা ডিলেমা, হোঁচট, ব্যর্থতাকে ফ্রেমে বন্দি করেছেন পরিচালক।
আর এই সিরিজ়ের প্রাপ্তি করিশ্মা কপূর আর ডিনো মোরিয়া। দু’জনকেই বহুদিন পরে দেখা গেল। এই সিরিজ় দিয়েই করিশ্মা ওয়েবে ডেবিউ ও কামব্যাক করলেন বলা যায়। মনে হল, ‘বিবি নাম্বার ওয়ান’-এর করিশ্মাই যেন এ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপডেটেড হয়ে ফিরে এসেছেন। আর ডিনোকেও বেশ লাগল। সিরিজ়ে মাদারস গ্রুপের তিনি মধ্যমণি। সব মায়েরাই তাঁর মতো হ্যান্ডসাম, হেল্পফুল সিঙ্গল পেরেন্টের প্রতি আকৃষ্ট। আর সেই আকর্ষণ মোবাইল থেকে দর্শককেও বশ করতে সময় নেয় না।
সিরিজ়ের প্রথম দিকের এপিসোডগুলি আর একটু যত্ন নিয়ে বানানো যেত। বরং শেষ চারটি এপিসোডই গোটা সিরিজ়টি ধরে রেখেছে বলা যায়। শেষটা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। কথায় আছে শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। তবে এ ক্ষেত্রে তা আর হল কই!
আরও পড়ুন: বলিউডের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অনুরাগ-সুজিত