সিজ়ার গনজ়ালভেস। ছবি: সংগৃহীত।
নিজের নাচের ওয়ার্কশপের জন্য মাঝেমধ্যেই তিনি কলকাতায় আসেন। তবে বস্কো-সিজ়ার (বস্কো মার্টিজ় ও সিজ়ার গনজ়ালভেস) জুটির সিজ়ার গনজ়ালভেস সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন একটি বাংলা ছবির প্রচারে। জিৎ ও রুক্মিণী মৈত্র অভিনীত ‘বুমেরাং’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফির দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেই এক ফাঁকে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
‘বুমেরাং’ ছবিতে দু’টি গানের নৃত্য পরিচালনা করেছেন সিজ়ার। জিৎ বাংলার সুপারস্টার। তাঁর সঙ্গে কাজ করে উচ্ছ্বসিত সিজ়ার। বললেন, ‘‘অসাধারণ! আমার স্ত্রী (আলভিনা গনজ়ালভেস) আমার সহকারী, ও কলকাতায় এসে জিৎ ও রুক্মিণীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ওর কাছেই জিতের প্রশংসা শুনেছিলাম।’’ সিজ়ার জানালেন, তার পর গানের শুটিংয়ের সময় তিনিও একই ভাবে জিৎকে পেয়েছিলেন।
তবে বাংলা ছবিতে এর আগেও কাজ করেছেন সিজ়ার। সে বার তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলার আর এক সুপারস্টার দেব। ‘খোকাবাবু’ ছবিতে কাজের প্রসঙ্গে সিজ়ার বললেন, ‘‘মনে আছে, সেই গানটা খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।’’ সিজ়ার জানালেন, কলকাতায় একটা রিয়্যালিটি শোয়ের দৌলতে দেব-রুক্মিণী, দু’জনের সঙ্গেই তাঁর পূর্ব পরিচিতি ছিল। তাই রুক্মিণীর সঙ্গেও ফ্লোরে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু তার পর বাংলায় আবার কাজ করতে ১২ বছর সময় লেগে গেল কেন? সিজ়ারের কথায়, ‘‘প্রস্তাব ছিলই। কিন্তু ভাল কাজ না হলে আমি করতে চাই না।’’
বলিউডের প্রথম সারির কোরিয়োগ্রাফার হয়েও আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে এক পায়ে রাজি সিজ়ার। তবে সে ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ শর্তও রয়েছে। শুধু বললেন, ‘‘আমি শুধু বলি, প্রোডাকশনের গুণমান যেন ঠিক থাকে। তার জন্য আমি নিজের পারিশ্রমিকও কমাতে রাজি।’’ কারণ হিসাবে সিজ়ার জানালেন, তিন দশকের প্রচেষ্টায় নৃত্যজগতে তিনি যে নাম তৈরি করেছেন, তা সহজে নষ্ট হতে দিতে চান না।
বস্কো (বাঁ দিকে) ও সিজ়ার। ছবি: সংগৃহীত।
‘বস্কো-সিজ়ার’ জুটি এখন ভেঙে গিয়েছে। তবে নিজেদের সংস্থাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই দু’জনে সমানতালে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু নেপথ্যে কোন সমীকরণ কাজ করছে? সিজ়ার বললেন, ‘‘আমরা কিন্তু ছোটবেলার বন্ধু। পেশাগত জীবনে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। তাই আমরা আলাদা কাজ করি। কিন্তু ও এখনও আমার ছোট ভাইয়ের মতো।’’ মতপার্থক্যের জন্য নিজেদের তৈরি ব্র্যান্ডকে ভাঙতে রাজি ছিলেন না দুই বন্ধুই। সিজ়ারের কথায়, ‘‘কেউ যদি আমাদের একসঙ্গে চান, তা হলে আমরা কাজ করব। সেখানে তো কোনও সমস্যা নেই।’’ কথাপ্রসঙ্গেই উদাহরণ দিলেন তিনি। জানালেন, কমল হাসন অভিনীত দক্ষিণী ছবি ‘ইন্ডিয়ান ২’ ছবিতে কাজ করছেন। একই ভাবে ‘পাঠান’ ছবির ‘ঝুমে জো পাঠান’ বা ‘ওয়ার’-এর ‘জয় জয় শিব শঙ্কর’ গানে একযোগে কাজ করেছে এই চর্চিত জুটি।
সম্প্রতি হৃতিক রোশন অভিনীত ‘ফাইটার’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে তাঁর নামের উল্লেখ না থাকায় সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বস্কো। বিষয়টা নিয়ে সিজ়ারের কী মত? শিল্পী সাফ বললেন, ‘‘আমরা দু’জনেই স্বাধীন ভাবে কাজ করি। তাই ওর মন্তব্য নিয়ে আমার কিছু বলা উচিত নয়।’’ একই সঙ্গে সিজ়ার যোগ করলেন, ‘‘কোরিয়োগ্রাফারদের প্রাপ্য নাম দেওয়া হয় না, এই মতামতের সঙ্গে আমি হয়তো ২৫ শতাংশ সহমত হব। আমার মা বলেছিলেন, পরিশ্রম করে যেতে। পরিচিতি ঠিকই আসবে। আমি সেটাই করি।’’
এই মুহূর্তে একাধিক ছবির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন সিজ়ার। মুক্তি পাবে ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’। এ ছাড়াও রয়েছে ‘ধড়ক ২’ এবং ববি দেওলকে নিয়ে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি। তবে সিরজ়ার জানালেন, খুব দ্রুত তিনি পরিচালনায় আসতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি নয়, আমি ওয়েব সিরিজ় দিয়ে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করতে চাই।’’ তবে কোরিগ্রাফার বলে কোনও মিউজ়িক্যাল ছবি নয়, অ্যাকশন থ্রিলার পরিচালনা করতে ইচ্ছুক সিজ়ার। এর পর আবার কবে কলকাতায় আসবেন তিনি? হেসে বললেন, ‘‘টলিউড থেকে ডাক পেলেই চলে আসব।’’