গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
‘রাম-শাসন’ কায়েম হল না। ৩৪ বছরের ‘বাম-শাসন’-এর পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখতে চলেছেন বামপন্থীবিহীন রাজ্য বিধানসভা। যেখানে সিপিএম-সহ রাজ্যের বামপন্থী দলগুলির কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিই থাকবেন না। আর সেটা হল বহু দিন পর রাজ্যের বামপন্থী রাজনীতিতে একঝাঁক তরুণ মুখ আসার পরেও। সমালোচকদের মতে, তৃণমূলের ১০ বছরের ‘অপশাসন’-এর পর!
বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব থাকবে না বামপন্থীদের নিয়ে গড়া সংযুক্ত মোর্চার আর এক বড় শরিক কংগ্রেসেরও। এ বার বিধানসভা ভোটের ফলাফলে তাঁদের ঝুলিও শূন্য।
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিনের বামপন্থী আন্দোলনের পরম্পরা এবং তার পর দু’-দু’টি যুক্তফ্রন্ট সরকারে বামপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব, কখনও বা কর্তৃত্ব আর সবশেষে ১৯৭০-এর দশক থেকে একটানা বাম-রাজত্বের পর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এ বার বিধানসভায় যা দেখবেন তা একেবারেই অভিনব। তা আরও নজর কেড়েছে রাজ্যটি ‘বামপন্থী’ হিসেবে ভারত, এমনকি অন্যান্য দেশেও পরিচিত বা প্রচারিত বলেই।
পরিসংখ্যানে নজর রাখলে বোঝা যায়, এই ঘটনা হঠাৎ ঘটেনি। বামপন্থীদের ‘অধঃপতন’ পশ্চিমবঙ্গে কার্যত ধারবাহিক এবং ‘নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত ১৫ বছর ধরে।
২০০৬-এ রাজ্য বিধানসভার ২৩৫টি আসন জিতে ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট। অধঃপতনের শুরু তার পর থেকেই। ২০১১-য় উত্তাল তৃণমূল ঝড়েও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাননি বামপন্থীরা। বিধানসভায় পেয়েছিলেন ৬২টি আসন। কিন্তু তার পর সরকার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তিবৃদ্ধি তো দূরের কথা, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের আসন কমে যায় ৩০টি। সে বছর রাজ্য বিধানসভায় ছিলেন মাত্র ৩২ জন বাম বিধায়ক। শতকরা হিসেবে বামপন্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ খুব কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২৬.১ শতাংশে।
তার পরেও বিধি বামই থেকেছে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের ক্ষেত্রে। গণদেবতা তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েই থেকেছেন। তাই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি রাজ্যের বামপন্থীরা। একটি আসনও তাঁরা পাননি রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে। তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ কমে প্রায় হয়ে গিয়েছিল ৪ ভাগ! বামপন্থীরা পেয়েছিলেন সাকুল্যে ৭.৪৬ শতাংশ ভোট। লোকসভাগুলির অন্তর্গত বিধানভা আসনগুলিতেও বামেরা পিছিয়েই থেকেছেন।
এ বার বামপন্থীদের ‘কৃতিত্ব’, তৃণমূলের ১০ বছরের ‘অপশাসন’ আর বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করে তাঁদের প্রাপ্ত ভোটের হার মেরেকেটে ৫ শতাংশে পৌঁছতে পেরেছে। তার বেশি যেতে পারেননি বামপন্থীরা। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিপিএম পেয়েছে ৪.৬৩ শতাংশ, আরএসপি পেয়েছে ০.২৩ শতাংশ, সিপিআই পেয়েছে ০.২৩ শতাংশ আর ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে মাত্র ০.৫৮ শতাংশ ভোট।
একই ভাবে কমেছে কংগ্রেসেরও ভোটের হারও। ২০১৬-য় কংগ্রেস যেখানে পেয়েছিল ১২.৩ শতাংশ আর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিল ৫.৬১ শতাংশ ভোট, সেখানে এ বার কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ২.৮৬ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গের ‘বাম দুর্গ’-য় বামপন্থীরা কেন এ বার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন, তার উত্তর কি খুঁজে পেলেন অগ্রজ বামপন্থীরা?