অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
তখনও গোসাবার সভায় পৌঁছননি অমিত শাহ। মাঠও সে ভাবে ভরেনি। মঞ্চ স্যানিটাইজ করে চেয়ার পাতার কাজ চলছে। তখনই আচমকা লাউডস্পিকারে গোটা এলাকা জুড়ে গমগম করে বাজতে শুরু করে, ‘কন্যাশ্রী মেয়েটা আমার হচ্ছে যখন ইঞ্জিনিয়ার..বন্ধু এবার খেলা হবে’! শুধু ‘কন্যাশ্রী’ই নয়, তৃণমূলে প্রবল জনপ্রিয় ছন্দোবদ্ধ ‘খেলা হবে’ গানের কথায় আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের কথাও। সেই গান বাজছে যুযুধান শিবিরের অন্যতম সেনাপতি অমিত-সভায়! চারদিকে শোরগোল। ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত বন্ধ করা হয় গান। কিন্তু ততক্ষণে ১৬ সেকেন্ড কেটে গিয়েছে। নেটমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হতে যা যথেষ্ট। স্থানীয় সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, ওই কাণ্ড একেবারেই ভ্রান্তিজনিত। লাউডস্পিকার পরীক্ষা করতে গিয়েই বিভ্রাট ঘটেছে। কিন্তু তাতে কি আর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিড়ম্বিত হওয়া আটকায়।
‘খেলা হবে’ গান এবং স্লোগান মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাঁধা লব্জ। প্রতিটি নির্বাচনী সভায় তিনি নিয়ম করে জনতার সঙ্গে ‘খেলা হবে’ দিয়ে প্রশ্নোত্তর তথা জনসংযোগ করেন। তৃণমূলের ছোট-বড়-মেজো-সেজো নেতারাও নিয়ম করে ওই স্লোগান ব্যবহার করেন। অনুব্রত মণ্ডল আবার ওই স্লোগানের আগে ‘ভয়ঙ্কর’ শব্দ জুড়ে তাকে আরও একধাপ উপরে তুলে দিয়েছেন। বীরভূমের জেলা সভাপতি বলেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে!’’ ওই স্লোগান ব্যবহার করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাল্টা বলেছেন, ‘‘দিদির খেলা শেষ। এবার শিক্ষা হবে। হাসপাতাল হবে।’’ ফলে অমিতের সভার আগে ওই গান বেজে ওঠায় স্বভাবতই খানিক অস্বস্তিতে স্থানীয় বিজেপি নেতারা। তাঁদের বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে উত্তেজনাপূর্ণ ভোট-পরিস্থিতিতে শাসক তৃণমূল বিষয়টি সোৎসাহে লুফে নেওয়ায়।
‘খেলা হবে’ গানটির মধ্যে ‘কন্যাশ্রী’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, বিজেপি তাদের ইস্তাহারে ‘বালিকা আলো’র ‘সঙ্কল্প’ গ্রহণ করেছে। তৃণমূলের দাবি, যা মমতার ‘কন্যাশ্রী’র অনুকরণেই করা হয়েছে। ফলে অমিতের সভার আগে ‘খেলা হবে’ তথা ‘কন্যাশ্রী’ সংক্রান্ত গান বেজে ওঠায় অস্বস্তিতে বিজেপি। ওই ঘটনার পর সভামঞ্চে এসে পৌঁছন অমিত। তাঁর কানে বিষয়টি পৌঁছেছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে অমিত বক্তৃতা করে চলে যাওয়ার পরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়নি। সভার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতাদের একাংশ দাবি করেন, দলের যে কর্মীরা মাইক বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন, মাইক পরীক্ষা করতে গিয়ে তাঁরাই ওই ‘ভুল’ করে ফেলেছেন। বিজেপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাংগঠনিক জেলা (পূর্বভাগ) সভাপতি সুনীত দাস বলেন, ‘‘মাইক চেকিং চলছিল। যে সংস্থা এবং কর্মীরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা পরীক্ষা করছিলেন। ভুলবশত গানটি বেজে ওঠে। বিজেপি-র কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। এটা নিয়ে এত কিছু ভাবারও দরকার নেই।’’ স্থানীয় বিজেপি-র অন্য একটি অংশের বক্তব্য, কিছু কিছু সময়ে লোক জোটানোর জন্য এবং মাইকের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য বড় জনসভার আগে মাইকে ‘এই তৃণমূল আর না’ গোছের কিছু গান বাজিয়ে থাকেন বিজেপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত তেমনই করা হচ্ছিল। তা করতে গিয়েই ‘ভুল’ গান বাজিয়ে ফেলা হয়েছে।