মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রামে মুখোমুখি না হলেও কর্মসূচির চাপানউতর চলল যুযুধান দুই প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে। বুধবার তৃণমূল ও বিজেপি-র দু’টি কর্মসূচিতে দুই প্রার্থী নন্দীগ্রামেই ছিলেন। মমতা স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিয়ে হলদিয়ায় মনোনয়ন জমা দিতে যান। আর শুভেন্দু দলের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। সেখানে একটি মিছিলে অংশ নেন তিনি। পরে এক সভায় মমতাকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ভেজাল হিন্দু। পদবিটা ব্যানার্জি হলে নিজেকে হিন্দু বলতে হচ্ছে কেন? এখন উনি আর ইনশাল্লাহ বলছেন না। বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন শুধু হিন্দু ধর্ম বোঝেন। আমার ধর্ম তো মানবতার ধর্ম।’’
মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি কর্মিসভা করেন মমতা। বিজেপি-কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে আসবেন না।’’ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কি, আমার সঙ্গে হিন্দুত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা করবেন নাকি!’’ কর্মিসভার মঞ্চ থেকে চণ্ডীপাঠও করেন মমতা। বুধবার সেই একই জায়গায় মিছিল করেন শুভেন্দু।
নন্দীগ্রাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে দলীয় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের পরে টেঙ্গোয়া মোড় থেকে একটি মিছিল হয়। সেখানে শুভেন্দু দাবি করেন, মঙ্গলবার মমতা স্থানীয় জানকীনাথ মন্দিরে চটি পরে প্রণাম করেছেন। এর পরেই ‘ভেজাল হিন্দু’ বলে আক্রমণ শানান। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও অবদান নেই। এখানকার কোথায় কী আছে তারও কিছুই জানেন না উনি।’’
বুধবার শুভেন্দুর মুখে ‘হীরক রাজার দেশে’র বিখ্যাত সংলাপের অনুকরণও শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘‘দড়ি ধরে মারো টান, রানি হবে খান খান।’’ মঙ্গলবার মমতা দলের কর্মিসভায় তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন কি না তার অনুমতি চেয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতাকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনি জানতে চেয়েছিলেন না, নন্দীগ্রামে কি দাঁড়াব? আসলে আপনাকে নন্দীগ্রামে দাঁড়াতে হইবেই, আর হারিয়া যাইতে হইবেই।’’ এর পরেই শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘আমি নন্দীগ্রামের উন্নয়ন করেছি সাধ্য মতো। কিন্তু যিনি দাঁড়িয়েছেন তিনি তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মালিক। নন্দীগ্রামে কাজ করতে দেননি। সব সময় হিংসা করেন, পাছে শুভেন্দু মাইলেজ নিয়ে নেয়।’’
মমতার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে সভার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। যে শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে মমতা মনোনয়ন জমা দিতে গেলেন তার সামগ্রিক উন্নয়ন তাঁর হাতেই হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। এত দিন যে রাম নাম শুনলে দিদি চটে যান, সেই রাম মন্দিরে (জানকী মন্দির) চটি পায়ে পুজো দিয়ে গেলেন দিদিমণি। এ সব ঢপের চপ কেউ খাবে না।’’
শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘আপনারা জানেন নন্দীগ্রামের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। তখন যুব সভাপতি ছিলাম। আমি মানব ধর্ম পালন করি। নির্বাচনের পরে হিন্দু, মুসলিম, শিখ করি না। ওরা বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে।’’ মমতার মঙ্গলবারের বক্তব্য টেনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘দিদিমণি বলেছেন, নন্দীগ্রামে একজনও বেকার থাকবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে নন্দীগ্রামের ৩০ হাজার যুবক বাইরের রাজ্যে আছেন এই মহিলার জন্য। শহিদ পরিবারের ৬ জন গ্রুপ ডি পাশ করেও চাকরি পাননি। তাঁদের চাইলে সামনে হাজির করতেই পারি।’’ একই সঙ্গে বুধবার অনেক আশ্বাসও দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে চিট ফান্ডের টাকা ফেরৎ করাব।’’
শুভেন্দুর জবাবে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে চলেন এবং নিজের বাড়িতে কালীপুজো করেন। এটা সবার জানা। সুতরাং কে কতটা হিন্দু তার প্রতিযোগিতায় উনি নেই। বরং কেউ কেউ কত শতাংশ কোন ভোট পাব, তা নিয়ে রাজনীতি করছেন। তৎকাল বিজেপি-র নেতাদের কাজই হচ্ছে মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে অন্য বিষয় থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা।’’