রাজ চক্রবর্তী।
আমি ছবির জগতের মানুষ। এতদিন পেশাগত জীবন ছাড়া অন্য কিছু বুঝিনি। মনিটরের পিছনে হাতে একটা মাইক নিয়ে বসে গল্প তৈরিতেই মন দিয়েছি। ২০০৮ সালে আমার প্রথম ছবি মুক্তি। এর পর ১২টা বছর কেটে গিয়েছে। পরিণত হয়েছি। মনে হয়েছে, মানুষ আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছেন, এ বার তা ফিরিয়ে দেওয়ার পালা এসেছে। সেটা করতেই এ বার রাজনীতির ময়দানে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে আগেও প্রচার করেছি। দিদির কথায় তাই সামনে এসে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। জিততে পেরে ভাল লাগছে।
ব্যারাকপুর কেন্দ্র আমার বাড়ি হালিশহরের খুব কাছের জায়গা। কলেজ জীবনে ওখানকার সব অলিগলিই আমার ঘোরা। প্রচারে গিয়ে মনে হত ঘরেই ফিরে গিয়েছি। ওখানকার মানুষদেরও ঘরের মানুষই মনে হয়েছে। তবে কলকাতা থেকে ব্যারাকপুরের দূরত্ব অনেক। রোজ যাতায়াতেই অনেকটা সময় বেরিয়ে যেত। অগত্যা চক্রবর্তী মশাইয়ের নতুন বাসা হয়েছিল ব্যারাকপুরের চক্রবর্তীপাড়ায়। কয়েকদিনের জন্য ওই জায়গাটাই হয়ে উঠেছিল ঘর-বাড়ি-সংসার। কিন্তু শুভকে ছেড়ে, মা আর ইউভানকে ছেড়ে এতগুলো দিন কাটাতে হবে, কখনও ভাবিনি। ছেলের ছবি দেখতাম থেকে থেকেই। ভাবতাম, ওই ক’দিনেই কি চোখের আড়ালে অনেকটা বড় হয়ে গেল ও? রোদে পুড়ে শ্যুটিং করে অভ্যস্ত। তাই প্রচার করতে গিয়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। মানুষের এত ভালবাসা বরং আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁদের মুখগুলো দেখেই কাজের খিদে বাড়ত। মনে হত, ওই মানুষগুলোর জন্য জিততেই হবে। কাজ করতে হবে। মনে মনেই তখন একটা তালিকা বানিয়ে ফেলেছিলাম। ব্যারাকপুর মূলত শিল্পাঞ্চল। গিয়ে দেখলাম, কয়েকটা কারখানা বন্ধ। যার ফলে অনেক মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন। সেগুলোকে খোলাতে চেয়েছিলাম। পানীয় জলের সরবরাহও নিয়েও একটা সমস্যা থেকে গিয়েছে। ভেবেছিলাম, প্রত্যেকে যেন সহজেই জলটা পান, সে দিকে নজর দিতে হবে। প্রচারে গিয়ে কিছু রাস্তাঘাটের অবস্থাও চোখে পড়েছিল। সেগুলি ঠিক না হলে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করাটা সত্যিই মুশকিল। এমনিতে জায়গাটা বেশ শান্ত। মানুষজনও ভাল। তবে শুনেছিলাম, ওখানে বাইরে থেকে কিছু লোকজন এসে প্রায়শই ঝামেলা করে। ফলে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনারও অবকাশ ছিল।
যখন ‘রাজ চক্রবর্তী’ হয়ে উঠিনি, তখন থেকেই ব্যারাকপুরের সঙ্গে আমার সখ্য। ভোটের দিন ব্যারাকপুরের রাস্তায় যখন আমার গাড়ি আটকে ঝামেলা করা হয়েছিল, তখনও মাথা গরম করিনি। হাতজোড় করে সকলকে ফিরে যেতে বলেছিলাম। মজা লেগেছিল, বিজেপি-র উৎসাহে মানুষ যখন আমায় বলছিল ‘গো ব্যাক’, তখন ওই ভিড় থেকেই একজন এসে নীচু গলায় বলছিল, ‘‘দাদা, এখন চলে যান। আমি আপনাকেই ভোট দেব।’’ আরও কত দেখলাম! যেমন আমি আর রুদ্র। ইন্ডাস্ট্রিতে শুরুর দিনগুলো লড়াইয়ের সময় একই ঘরে থেকেছি। সাফল্যের স্বপ্ন বুনেছি। এতগুলো বছর পর রাজনীতির ময়দানে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে রাজনীতির প্রভাব বন্ধুত্বে কেন পড়বে! আমার তরফ থেকে অন্তত পড়বে না।
জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। দায়িত্ব বেড়েছে। অনেক মানুষ আশা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। তাঁদের দেওয়া কথা রাখবই।