West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: দুই একদা ‘সতীর্থের’ লড়াইয়ে বাড়ছে তাপ

দল তৃণমূল না ব্যক্তি বিশ্বজিৎবাবু, কার জয়ের হ্যাটট্রিক হয়, না কি বামেদের আশা পূরণ হয়— তা দেখার অপেক্ষায় কালনা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৬:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

যখন তাঁরা এক দলে ছিলেন, তখনও তাঁদের মধ্যে ‘বিবাদের’ কথা শোনা যেত দলের অন্দরে। এখন এক জন নাম লিখিয়েছেন অন্য দলে। এ বার ভোটে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। আর কালনায় লড়াইয়ে নেমেই পরস্পরকে নানা অভিযোগে বিঁধতে শুরু করেছেন তৃণমূল প্রার্থী দেবপ্রসাদ বাগ ও বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। তাঁদের তরজায় যখন এলাকায় ভোটের উত্তাপ বাড়ছে, হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়ার জন্য তখন জোরকদমে প্রচার সারছেন সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ।

Advertisement

এক সময়ে বামেদের দুর্গ বলে পরিচিত এই কেন্দ্রটি ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের’ হাওয়ায় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। বিধায়ক হন বিশ্বজিৎবাবু। ২০১৬ সালেও তৃণমূলের টিকিটে জেতেন তিনি। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির থেকে মাত্র হাজার তিনেক ভোটে এগিয়ে থাকে তৃণমূল। ২০১৬-য় যেখানে বিজেপি ভোট পেয়েছিল মাত্র ৯ শতাংশ, সেখানে ২০১৯-এ তা দাঁড়ায় প্রায় ৪২ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। বিজেপি এ বার তাঁকেই প্রার্থী করেছে। তৃণমূলের হয়ে আসনটি ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন দলের শহর সভাপতি দেবপ্রসাদবাবু।

ভোট ঘোষণার পরে অন্য দলগুলির আগে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে যে সব এলাকায় ভোটে ধস নেমেছিল, সেগুলি চিহ্নিত করে আলাদা ভাবে প্রচার শুরু হয়েছে। দলের কোন বড় নেতা-নেত্রী কোথায় সভা করবেন, সে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের বেশিরভাগ ভোটার কালনা ২ ব্লকের আটটি পঞ্চায়েত এলাকার। ২০১১ সাল থেকে সেখানে তৃণমূল ভাল ‘লিড’ পেয়ে এসেছে। দলের ওই ব্লকের সভাপতি প্রণব রায় প্রার্থী দেবপ্রসাদবাবুর সঙ্গে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে নেমে পড়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এই কেন্দ্রে আমার অভিজ্ঞতা কম নয়। যা বুঝছি, জয় নিয়ে সন্দেহ নেই।’’ তৃণমূল নেতাদের অনেকের দাবি, বিজেপি বিশ্বজিৎবাবুকে প্রার্থী করায় তাঁদের সুবিধা হয়েছে। কারণ, বিশ্বজিৎবাবুর বিরুদ্ধে টেট-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রচারেও সে প্রসঙ্গ তুলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দেবপ্রসাদবাবুর দাবি, ‘‘মানুষের বিপুল সাড়া মিলছে। আশা করছি, গত বারের থেকেও ব্যবধান বাড়বে।’’

Advertisement

কিছুটা দেরিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। তবে প্রার্থী হয়েই শহর-গ্রাম ঘুরে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। ছোট-ছোট পথসভা, কর্মী-বৈঠক করছেন। তুলনায় দেরিতে প্রচারে নামলেও কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের তোলাবাজি, কাটমানি, ঘর তৈরি করে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়া, গ্রামে গ্রামে তৃণমূল নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার চিত্র মেনে নিতে পারছে না মানুষ। তাই গত দু’বারের থেকে এ বার আমার জয়ের ব্যবধান বাড়বে।’’ পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে প্রচারে সরব হচ্ছেন একদা ‘সতীর্থ’, এ বারের তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী।

ভোট-ময়দানে নতুন প্রার্থীকে নিয়ে আশাবাদী বাম শিবিরও। ইতিমধ্যে বামেদের তরফে দু’টি জনসভা সেরে ফেলা হয়েছে কালনা শহরে। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে শহরে এবং বিকেল থেকে গ্রামীণ এলাকায় টানা প্রচার চলছে প্রার্থীকে নিয়ে। সিপিএমের কালনা শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ গোস্বামীর দাবি, ‘‘বামেদের ব্রিগেড সমাবেশই বুঝিয়ে দিয়েছে, এ বার কী হবে। তৃণমূল, বিজেপিকে দেখে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আমাদের পক্ষেই রায় দেবেন মানুষ।’’ প্রার্থী নীরব খাঁয়ের বক্তব্য, ‘‘গ্রাম ও শহর, সব জায়গাতেই বহু মানুষের সাড়া পাচ্ছি। আমাদের মিছিলে লোক বাড়ছে। আশা করছি, ভাল ফল হবে।’’

দল তৃণমূল না ব্যক্তি বিশ্বজিৎবাবু, কার জয়ের হ্যাটট্রিক হয়, না কি বামেদের আশা পূরণ হয়— তা দেখার অপেক্ষায় কালনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement