জানুয়ারি মাসে নন্দীগ্রামে মমতা। —ফাইল চিত্র।
আসন ২৯৪। উৎসাহ এবং কৌতূহল তুঙ্গে তার দু’টিকে নিয়ে। ভবানীপুর এবং নন্দীগ্রাম।
ভবানীপুর তাঁর ‘বড় বোন’। আর ‘ছোট বোন’ নন্দীগ্রাম। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভা থেকে গত ১৮ জানুয়ারি এমনটাই জানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার পর দেখা গেল, ভবানীপুরে ভোটগ্রহণ সপ্তম দফায়, ২৬ এপ্রিল। আর নন্দীগ্রামে দ্বিতীয় দফায়, ১ এপ্রিল। প্রথমটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র। আর দ্বিতীয়টি তৃণমূল-ত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীর গড়। সম্প্রতি সেই নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মমতা। শেষমেশ দু’টি কেন্দ্র থেকেই কি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।
বাংলায় ৮ দফায় নির্বাচনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী, ৩৪ দিনে ২৯৪ আসনে ভোট হতে চলেছে। মমতা চাইলে দু’টি কেন্দ্র থেকেই ভোটে লড়তে পারেন। তবে এ বারের নির্বাচনে গ্রাম বনাম শহরের লড়াই উস্কে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। কলকাতা শহরে জোড়াফুল শিবিরের ঘাঁটি মজবুত জেনে গ্রামের মানুষকে কাছে টানতেই তিনি এমন কৌশল নিয়েছিলেন বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল। কিন্তু পাল্টা চালে শুভেন্দুকে সেই সময় মাত দেন মমতা। জমি আন্দোলনের সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে ভোটে লড়তে চান বলে জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। তবে বিজেপি নয়, নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে মমতা আসলে শুভেন্দুকেই চ্যালেঞ্জটা ছুড়েছিলেন। শুভেন্দুও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন মমতাকে। জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ালে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল দলনেত্রীকে হারাবে বিজেপি। তবে একটাই শর্ত, শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়াতে হবে মমতাকে। নন্দীগ্রাম এবং ভবানীপুর, দুই কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারবেন না, যাতে একটায় হেরে গেলে অন্যটিকে আঁকড়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যায়।
তৃণমূল দিলেও এখনও পর্যন্ত শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জের জবাব দেননি মমতা। আবার নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। বরং তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর উপরই এই গুরু দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। নন্দীগ্রাম থেকে তাঁকে প্রার্থী করা যায় কি না, তা দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন সুব্রতকে। এই সুব্রতই এক দশক আগে নিজের জেতা ভবানীপুর মমতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হন সুব্রত। মমতা তখন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ। পরে বিধানসভা নির্বাচনের পরে উপনির্বাচনে মমতা সুব্রতর কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় যান। আর সুব্রত মমতার কেন্দ্র থেকে লোকসভায়।
সেই থেকে ভবানীপুরই মমতার নির্বাচনী কেন্দ্র। এ বারের নির্বাচনে তিনি ভবানীপুরকেই বেছে নেন, নাকি নন্দীগ্রামকে, নাকি দু’টি কেন্দ্র থেকেই লড়েন, সেটাই এখন দেখার।