সাংবাদিক বৈঠকে মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
বিহারে ২৩৪ আসনে যদি ৩ দফায় ভোট হয়, তাহলে বাংলার ২৯৪ আসনে ৮ দফায় ভোট কেন? নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার এমনই প্রশ্ন তুলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের সিদ্ধান্তকে যদিও ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন ‘অভিনন্দন’ও। কিন্তু পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘আমি শক্ড!’’ এর পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলেও সরাসরি অভিযোগ করেছেন তিনি। ‘বিশেষ’ কাউকে বাংলায় সুবিধা পাইয়ে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। ভোটের আগে এজেন্সির ‘অপব্যবহার’-এর অভিযোগ তুলে মমতা বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে বলছি, টাকার খেলা বন্ধ করুন! আমরা কিন্তু সব বুঝতে পারছি।’’
পক্ষান্তরে, কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও বলেছেন, ‘‘আমরা চাই, বাংলার মানুষ যাকেই ভোট দিন, শান্তিতে ভোট দিন। ভোট ঘিরে যেন কোনও হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটে।’’ কংগ্রেসের বিধায়ক তথা নেতা মনোজ চক্রবর্তীর আবার মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে অতীতে এ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছেন, তাতে ৮ নয়, ১২ দফায় ভোট করানো উচিত ছিল কমিশনের।’’
শুক্রবার বিকেলে দিল্লির বিজ্ঞানভবন থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ চারটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে কমিশন। সেখানেই জানানো হয়, বাংলায় মোট ৮ দফায় ভোটগ্রহণ হবে। যে উদাহরণ বেনজির। সঙ্গে একমাত্র বাংলায় ২ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন। যা থেকে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কডা়কড়ির পথে যাচ্ছে কমিশন। ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৮ দফায় বাংলায় ভোটগ্রহণ এবং ২ মে ফল ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়। কমিশনের এই ঘোষণার পরই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মমতা। সেখানে কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে একহাত নেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু অসম, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে ১ দফায় ভোট হলে, পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফায় ভোট কেন? গত বছর বিহারে ২৩৪ আসনে ৩ দফায় ভোট হয়েছিল। কাদের সুবিধে করে দিতে এখানে ৮ দফায় ভোট?’’ পাশাপাশিই কমিশনের পর্যবেক্ষক বিবেক দুবেকে নিয়েও আপত্তি তুলেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এবং আমরা জানি উনি কী করে থাকেন!’’
মোট ৮ দফায় বাংলায় ভোট করাতে কমিশনের সিদ্ধান্তের পিছনে কেন্দ্রের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র হাতে এজেন্সি রয়েছে। ভোটের আগে এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করছে তারা। ভোটের আগে বাংলায় টাকা পাঠাচ্ছে। আমরা সব বুঝতে পারছি। কমিশনকে বলছি, টাকার খেলা বন্ধ করুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের কাজ করুন। কিন্তু তিনি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সব দল মিলে যদি মনে করে বাংলাকে ধ্বংস করবে, বাংলার মানুষ তার জবাব দেবেন। এক মাসে ৮ দফায় ভোট কি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঠিক করে দিয়েছে?’’ মমতার মন্তব্য, ‘‘মিস্টার নরেন্দ্র মোদী, মিস্টার অমিত শাহ, আপনাদের বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন! আমিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এক মহিলাকে এত ভয়!’’
আগামী ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায়, ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় এবং ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মোট ৩ দফায় ভোট হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আমাদের জোর বেশি। তাই ওখানে ৩ দফায় ভোট করছে। এক জন মহিলাকে এত ভয় যে বাইরে থেকে নেতা আনতে হচ্ছে! যতই ইচ্ছা নেতা আনুক। আমরা নেতা নই, ঘর মোছার ন্যাতা। খেলা হবেই। হারিয়ে ভূত করে দেব। বাংলাকে অসম্মান করার উত্তর দেবেন মানুষ।’’