প্রথম দফায় শান্তি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রীয় বাহিনীর। ফাইল চিত্র
আট দফার পয়লা নম্বর। নীলবাড়ির লড়াইয়ে ‘ভোট প্রথমা’ শুরু হল উৎসবের মেজাজেই। প্রথম দফায় ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ৫টি জেলার মধ্যে শনিবার ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার সব ক’টি আসনেই ভোটগ্রহণ চলছে। বাকি ৩ জেলায় আংশিক। পুরুলিয়ায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে জেলার ৯টি আসনেই। এ ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ৭টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও ভোটগ্রহণ হচ্ছে বাঁকুড়ার ৪টি আসনে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে বেলা ৩টে পর্যন্ত রাজ্যে ভোট পড়েছে ৭০.১৭ শতাংশ। দুপুরের পর পুরুলিয়া সদর কেন্দ্রের প্রার্থী সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তিনি বিজেপি কর্মীকে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন। দুপুরে খবর আসে, সাবাজপুটে একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে হামলা হয় বিজেপি নেতা সৌম্যেন্দু অধিকারীর গাড়িতে। তাঁর গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়, অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রামের ভোটারদের মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ তোলে তৃণমূল। দাঁতনেও কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়িতে ঢুকে মেরেছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা। শনিবার নন্দীগ্রামে ভোট ছিল না। তবে সেখানেও বিক্ষেপ্ত গোলমালের ঘটনা সামনে আসে। শুভেন্দুর সমর্থকদের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ তোলেন তৃণমূল সমর্থকরা।
সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে পটাশপুর ও খেজুরিতে। খেজুরির বটতলা এলাকায় বোমাবজির অভিযোগ ওঠে। বিজেপি কর্মীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের মারধর করেছে তৃণমূল। খেজুরির একনম্বর ব্লকের বীরবন্দ এলাকায় তৃণমূল বুথ কর্মীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। শালবনিতে সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী সুশান্ত ঘোষ অভিযোগ করেন, শুইমাদহ স্কুলের বুথে মোর্চার এজেন্টদের বসতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই নিয়ে তৃণমূলের বুথকর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে সুশান্তর। আক্রান্ত হয় সংবাদ মাধ্যমও। কাঁথি দক্ষিণের মাজিনায় বেলা ন’টার কিছু ক্ষণ পরে বন্ধ করে হয় ভোট। ইভিএম নিয়ে অভিযোগ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। ভোটকর্মীরা জানান, সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের জেরে সাময়িক ভাবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্য দিকে, ভোট শুরুর আগে উত্তপ্ত কেশিয়াড়ি বিধানসভার বেগমপুর এলাকা। বিজেপি-র নির্বাচনী কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেখানেই পরে উদ্ধার করা হয় এক বিজেপি কর্মীর দেহ। মৃত্যু নিয়ে উঠছে নানারকম অভিযোগ। ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। কেশিয়াড়ী বিধানসভার অর্জ্জুনগেড়িয়া ২২১ নং বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ, ভোট বন্ধ হয় সকাল থেকেই। শাবড়া বাপুজি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে জমায়েতের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরে ভূপতিনগরে তৃণমূল কর্মীদের মারধরের অভিযোগ। বুথের বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ভোটাররা ভয় পাচ্ছেন, ভোট দিতে যাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও ভোট প্রক্রিয়া ঠিক চলছে না বলে অভিযোগ। যদিও বিজেপি বলেছে, কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। গড়বেতার হেতাশোলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের মারধরের অভিযোগ। ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে, তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলায় ৭-৮ জন জখম হয়েছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একাধিক বুধে সিআরপিএফের বিরুদ্ধে ভোটদান প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীরা ঢুকে পড়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়েছে কেন হঠাৎ ভোটের শতাংশ বেড়ে গেল।
রাজনৈতিক হিসেবে প্রথম দফার ৩০টি আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনগুলির মধ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি বিজেপি। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ২০টিতে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বলরামপুর, জয়পুর, মানবাজার, কাশীপুর, পাড়া এবং রঘুনাথপুর— এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই জিতেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস জিতেছিল বাঘমুণ্ডি এবং পুরুলিয়া কেন্দ্র দু’টি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দেখা যায়, একমাত্র মানবাজার ছাড়া বাকি সব বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি। একই ভাবে, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনি এবং মেদিনীপুর— সব ক’টি কেন্দ্রে তৃণমূল জয়লাভ করলেও ২০১৯-এ খড়্গপুর এবং শালবনি ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলিতে এগিয়ে যায় বিজেপি।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার শালতোড়া, রানিবাঁধ এবং রাইপুরে জয়লাভ করে তৃণমূল। ছাতনায় জেতে বাম শরিক আরএসপি। ২০১৯-এ তাদের সকলকে ছাপিয়ে ওই চারটি কেন্দ্রেই এগিয়ে যায় বিজেপি। ২০১৬-য় পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর, খেজুরি, রামনগর এবং এগরায় জয়লাভ করে তৃণমূল। আবার ২০১৯-এ এর মধ্যে শুধুমাত্র এগরাতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু তখন শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন তৃণমূলে। এখন তিনি বিজেপি-তে। ২০১৬ সালে ঝাড়গ্রামের বিনপুর, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং ঝাড়গ্রাম— এই চার বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়লাভ করে তৃণমূল। ২০১৯-এ একমাত্র বিনপুর ছাড়া বাকি তিনটি কেন্দ্রেই এগিয়ে যায় বিজেপি।
শনিবার ভোটগ্রহণ পর্বে তাই বিজেপি-র লক্ষ্য থাকবে লোকসভা নির্বাচনের ধারা জিইয়ে রাখা। অন্য দিকে, তৃণমূলের লক্ষ্য হারানো জমি পুনরুদ্ধার।