Locket chatterjee

Bengal Polls: পরিশ্রমের মূল্যায়ন হয়নি, লকেটকে প্রার্থী করতেই রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস চুঁচুড়ার বিজেপি নেতা সুবীরের

দলের প্রতি অভিমান থেকেই যে এমন সিদ্ধান্ত, তা নিয়েও কোনও রাখঢাক করেননি সুবীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ২০:১৮
Share:

চুঁচুড়ায় লকেটের নাম ঘোষণা হওয়ার পরই সন্ন্যাস সুবীরের। —ফাইল চিত্র।

সবে বিজেপি-র প্রার্থিতালিকা ঘোষণা শেষ হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ‘জয়’ নিয়ে আশাবাদী বলে বিবৃতি শেষ করেছেন চুঁচুড়ার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তার পরেই রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা করলেন চুঁচুড়ার বিজেপি নেতা সুবীর নাগ। দীর্ঘ দিন তিনি দলের জেলা (সাংগঠনিক) সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। নীলবাড়ির লড়াইয়ে চুঁচুড়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও উঠে আসছিল তাঁর নাম। কিন্তু ওই কেন্দ্রে হুগলির সাংসদ লকেটকে পদ্মশিবির প্রার্থী ঘোষণার পরমুহূর্তেই চিরতরে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, ‘মূল্যায়নে ভুল হয়েছে দলের’।

Advertisement

রবিবার তৃতীয় ও চতুর্থ দফার যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি, তাতে হুগলির সাংসদ লকেটকে চুঁচুড়ার প্রার্থী করা হয়েছে। তার পরেই অবসরের কথা ঘোষণা করেন সুবীর। দলের প্রতি অভিমান থেকেই যে এমন সিদ্ধান্ত, তা নিয়েও কোনও রাখঢাক করেননি সুবীর। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও যেন দল আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। তেমনই মনে হয়েছে আমার। এখনও দলের আদর্শ মাথায় নিয়েই রয়েছি। কিন্তু যে পরিশ্রম করে দলকে দাঁড় করিয়েছি, তার মূল্যায়নটা কোথাও যেন হল না!’’

রবিবার প্রার্থিতালিকা সামনে আসার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু সুবীর রাজনীতি থেকে একেবারে ‘সন্ন্যাস’ নেবেন তা পদ্মশিবিরের রাজ্য নেতাদের কেউই আঁচ করতে পারেননি বলে দলের অন্দরের খবর। তবে লকেটের দাবি, গোটাটাই দলের সিদ্ধান্ত। তবু তিনি এক বার কথা বলে দেখবেন বলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে ফোনে জানিয়েছেন লকেট। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভের ব্যাপার নেই। সাময়িক এ সব হয়। দরকারে আমি নিজে কথা বলব। কিন্তু এখানে তো আর ব্যক্তি হিসেবে ভাবলে চলবে না। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে আমাদের সকলকে। একসঙ্গে লড়তে হবে।’’

Advertisement

যদিও চুঁচুড়ায় বিজেপি-র একাংশে দাবি, লকেটের ‘কলকাঠি’তেই প্রার্থী হওয়া হল না সুবীরের। ওই অংশের দাবি, হুগলি থেকে লকেট যখন লোকসভার প্রার্থী হন, তখন তিনি একেবারেই আনকোরা ছিলেন। সেই সময় সুবীরের উপরই ভোট উতরোনোর দায়িত্ব এসে পড়ে। অভিনেত্রীকে রাজনীতির আঁটঘাট হাতে ধরে তিনিই শিখিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব বাড়তে শুরু করলে, ক্রমশ হুগলির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে শুরু করেন তিনি। সভাপতি পদ থেকে সুবীরের অপসারণ এবং সেই জায়গায় গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নিয়োগের পিছনেও তাঁর হাত ছিল বলে ওই অংশের দাবি। সুবীর-ঘনিষ্ঠদেরও দাবি, চুঁচুড়ার প্রার্থী হিসেবে সুবীরের নাম এ বার প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যে দলের ওবিসি মোর্চার সভাপতি স্বপন পাল ছাড়া তেমন কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল না তাঁর। তালিকায় একেবারে উপরেই নাম ছিল তাঁর। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক হয়ে প্রার্থিচয়ন নিয়েও ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন লকেট। তার জন্যই শেষ মুহূর্তে সুবীরের নাম বাদ গেল।

সুবীর-ঘনিষ্ঠরা আরও অভিযোগ করেন যে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর নব নির্বাচিত দিলীপ ঘোষ এবং লকেটকে চুঁচুড়ায় ডেকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন সুবীর। ভোটের আগে চণ্ডীতলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সেই সময় কাছে ডেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন মোদী। পিঠ চাপড়ে দেন। দুর্গাপুজো কমিটিগুলিতে তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে গেরুয়া রাজনীতিতে বাঙালি আবেগ মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাতেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। সুবীর-ঘনিষ্ঠদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠায় সুবীরের অন্তরায় হয়ে ওঠেন লকেট। যে কারণে সভাপতি পদ চলে যাওয়ার পর পর্যবেক্ষকের মতো ‘নামসর্বস্ব’ পদে বসানো হয় সুবীরকে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সম্প্রতি চুঁচুড়ার সভাতেও মোদীর কাছে সুবীরকে ঘেঁষতে দেননি লকেট। নিজেকেই হর্তাকর্তা হিসেবে তুলে ধরেন। এমনটাই সুবীর-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ।

তবে লকেট-ঘনিষ্ঠদের দাবি, সুবীরই লকেটকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছিলেন। দল দায়িত্ব দিলেও, ২০১৯-এ লকেটের হার নিশ্চিত করতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি তিনি। তার পরেও লকেট জিতে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। সেই থেকেই দূরত্ব বাড়ে দু’জনের মধ্যে। তবে বিধানসভা নির্বাচনে কাকে, কোথায় দাঁড় করানো হবে, পুরোটাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করেন। সেখানে অন্য কারও দখলদারির প্রশ্নই নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement