অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
এ বার গরু পাচারকাণ্ডে নাম জড়াল অনুব্রত মণ্ডলের। বৃহস্পতিবার শেষ দফায় নির্বাচন রয়েছে বীরভূমে। তার আগে তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে তলব করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। ঠিক কী কারণে তাঁকে ডাকা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়। তবে তদন্ত চলাকালীন অনুব্রতর নাম উঠে আসাতেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। অনুব্রতর এক সহযোগীকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন অনুব্রত। তৃণমূলের তরফেও এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে বীরভূমে অনুব্রতর দাপট কারও অজানা নয়। ভোটের গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধেই দিয়েছে দল। তাই অনুব্রতকে তলবের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে মত জোড়াফুল শিবিরের। তাদের দাবি, শনিবার বোলপুরে দাঁড়িয়ে নাম না করে অনুব্রতকে জেলে ঢোকানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের এই সক্রিয়তার যোগ রয়েছে।
নির্বাচনের আগে অনুব্রতকে নজরবন্দি করার চেষ্টা চলছে বলে সম্প্রতি বোলপুরে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বীরভূমে কেষ্টর উপর ওদের খুব রাগ। তাই প্রতিবার নির্বাচনের সময় কেষ্টকে নজরবন্দি করে। নজরবন্দি অবৈধ এবং অপরাধ। এ বার যদি নজরবন্দি করে, কেষ্ট আদালতে যাবে।’’
এর আগে, শুক্রবার আয় বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় অনুব্রতকে নোটিস ধরায় আয়কর দফতর। নোটিস পাঠানো হয় তাঁর কয়েক জন আত্মীয়কেও। আয়কর দফতরের আধিকারিকদের অভিযোগ, আসানসোল, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি রয়েছে অনুব্রতর। আয়কর দফতর নোটিস ধরানোর আগে অনুব্রতর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও। ২ মে ভোটের ফল বেরোনোর পর বিশেষ কমিটি গড়ে তদন্তের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
দীর্ঘ তদন্তের পর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গরু পাচারকাণ্ডে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তাতে গরু পাচারচক্রের মূল পাণ্ডা হিসেবে নাম উঠে আসে এনামুল হকের। এ ছাড়াও, বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমার, গুলাম মুস্তফা ও আনারুল শেখ-সহ আরও কয়েক জনের নাম ছিল চার্জশিটে। নির্বাচনী আবহেও চানা ধৃতদের জেরা করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাতে তৃণমূলের যুব নেতা বিনয় মিশ্র এবং তাঁর ভাই বিকাশ মিশ্রর নামও উঠে আসে। দুই ভাই-ই সিবিআইয়ের নজরে ছিলেন। দফায় দফায় জেরার পর বিকাশকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
বিনয়কে জেরা করতে চেয়ে আগেই নোটিস দিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু গোয়েন্দাদের সামনে হাজিরা দেননি তিনি। এর পর রাসবিহারিতে তাঁর একটি বাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এখনও পর্যন্ত বিনয়ের নাগাল পাননি গোয়েন্দারা। তিনি বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। সম্প্রতি বিনয়ের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে সুপারিশ করেছে সিবিআই।