West Bengal Assembly Election 2021

WB Election Result: বাড়ল ভোট, তবুও তৃতীয় স্থানে নেপাল

তৃণমূলের ঝুলিয়ে গিয়েছে ৭৫,০৯৫ ভোট। ৬১,৯৩৬ ভোট পেয়েছে আজসু। নেপালবাবু ৫০,৬১৫ ভোট।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৫:৫১
Share:

নেপাল মাহাতো। ফাইল চিত্র।

টানা চার বারের বিরোধী বিধায়ক। রবিবার ভোট গণনায় দেখা গেল, সেই নেপাল মাহাতোকে এ বার তৃতীয় স্থানে রেখেছে বাঘমুণ্ডি। প্রথম তৃণমূল। দ্বিতীয় বিজেপি-সমর্থিত আজসুর প্রার্থী। রবিবার মাঝপথেই গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী নেপালবাবু। সোমবার দিনভর তাঁর ফোন ছিল বন্ধ। জবাব মেলেনি মোবাইলে পাঠানো মেসেজেরও। তবে ঘনিষ্ঠরা জানান, যে এলাকাগুলি থেকে আগে অনেক বেশি ‘লিড’ আসত, এ বারে আসেনি।

Advertisement

জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এর ইঙ্গিত মিলেছিল গত লোকসভা ভোটেই। সে বার পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন নেপালবাবু। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ‘লিড’ ধরে রাখা দূর-অস্ত্, নিজের কেন্দ্র বাঘমুণ্ডিতেই বিজেপির থেকে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েন। এ বার ভোটের আগে বাঘমুণ্ডির চড়িদার কিছু ছৌ-শিল্পী আলাপচারিতায় বলছিলেন, ‘‘উনি তো অনেক দিন থাকলেন। নতুন কাউকেও দেখা যেতেই পারে।’’ পরে, সেই কথা শুনে হেসেছিলেন নেপালবাবু।

গত বছর লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো, আরকেএসওয়াই-২ শ্রেণিভুক্ত গ্রাহকদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার দাবি তোলা-সহ নানা বিষয়ে লড়ে গিয়েছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ তুলে নেপালবাবুর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের কিছু নেতা-কর্মী বলেন, ‘‘লোকসভা আর বিধানসভা ভোটের প্রেক্ষাপট আলাদা। আর বাঘমুণ্ডি কখনও তাঁকে খালি হাতে ফেরায়নি। এই বিশ্বাস গণনার আগের দিন পর্যন্ত অটুটই ছিল।’’ গণনায় দেখা যায়, তৃণমূলের ঝুলিয়ে গিয়েছে ৭৫,০৯৫ ভোট। ৬১,৯৩৬ ভোট পেয়েছে আজসু। নেপালবাবু ৫০,৬১৫ ভোট।

Advertisement

বাবা দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ। জেলায় নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠেছে তাঁর নামেই। নেপালবাবু সেই উত্তরাধিকার বহন করেছেন। ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে রাজ্যস্তরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। ঝালদার টিকিট না পেয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবু নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তৎকালীন বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য সত্যরঞ্জন মাহাতোকে হারিয়ে প্রথম বিধানসভায় পা রাখেন। সেই থেকে টানা বিধায়ক। এ বার ভোটের আগে অবসর নিয়েছেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি থেকে।

লোকসভার থেকে নিজের ভোট প্রায় দ্বিগুণ বাড়ালেও তৃণমূল প্রার্থীর থেকে প্রায় সাড়ে চব্বিশ হাজার ভোটে এ বার ইনিংস শেষ হয়েছে নেপালবাবুর। জেলার রাজনীতির পর্যবক্ষকদের একাংশের মতে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পরে, বিজেপির উত্থান আর কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশের তৃণমূলে চলে যাওয়া মিলিয়ে এলাকায় নেপালবাবুর ‘ভোট ম্যানেজমেন্ট’ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। নতুন ভোটার এবং প্রত্যন্ত গ্রামের ভোটারদের কাছে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার পক্ষে সংগঠনও যথেষ্ট পোক্ত ছিল না।

পাশাপাশি, অতীতে কখনই বাঘমুণ্ডিতে সাফল্য না পাওয়া তৃণমূল এ বার ভোটের আগে সেখানে অনেক সময় আর মেহনত দিয়েছিল। বাঘমুণ্ডিতে জয়ী তৃণমূলের প্রার্থী সুশান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘নেপালবাবু যোগ্য প্রার্থী, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। মুখ্যমন্ত্রী বরাবর এই এলাকার জন্য প্রচুর কাজ করেছেন। আমরা মানুষকে বলেছিলাম, নেপালবাবুকে চার বার সুযোগ দিয়েছেন, আমাদের এক বার দিয়ে দেখুন। আজ রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সাফল্যের শরিক হয়েছে বাঘমুণ্ডি। আমরা সেই মর্যাদা রাখার চেষ্টা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement