বে-হুঁশ: মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর প্রচারে মাস্কহীন সমর্থকদের ভিড়ে দূরত্ব-বিধির বালাই নেই। স্বাতী চক্রবর্তী
ঠিক এক বছর আগের এই সময়টা আমি এখন শুধু গল্পকথায় জানি। নাগাড়ে তিন সপ্তাহের বেশি পৃথিবীতে কী ঘটেছে দূরের কথা, আমার জীবনের হিসেবটাও স্মৃতি থেকে পুরো লোপাট। কিন্তু এত দিন কোমায় থেকে ফের উঠে দাঁড়ানোর জন্য দয়া করে আমায় হিরো ভাববেন না। কলকাতা, বাংলা বা গোটা দেশেই পুরনো দুঃসময় যখন ফিরছে, সবাইকে আর এক বার আমার কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণাটুকুই মনে করাতে চাইব।
কোভিডের ধাক্কা প্রায় মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছিল আমাকে। আমার অভিজ্ঞতা প্রায় নতুন ভাবে জন্মানোরই মতো। সুতরাং, এটা মাথায় রাখুন, একটা শিশুর থেকেও কমজোরি অবস্থায় উঠে দাঁড়ানো, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া— সবটাই বড় কঠিন অর্জন। আমার স্ত্রী, মায়ের উৎকণ্ঠার কথাও ভাবুন। যে দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে আমি বা আমার প্রিয়জনেরা জীবনের মূল্য বুঝতে পারছি, তা একবার কল্পনা করার চেষ্টা করুন। সবাই দ্বিতীয় বার বাঁচার সুযোগ পায় না। আমি পেয়েছি, সেই অধিকারেই আপনাদের সচেতন হতে বলছি।
নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজে আমি এখন ফের বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি। গাড়ি চালিয়ে নানা জায়গায় যেতে হয়। তাতেই মাস্ক পরতে লোকজনের অনীহা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে আমার পাড়া লেক অ্যাভিনিউয়ের কাছে আজই একটি ভোটপ্রচারে প্রায় সবার মুখে মাস্ক দেখে শান্তি পেয়েছি! একটা কথা অবশ্যই বলব, থিকথিকে ভিড়ে ঠাসা সভায় বিভিন্ন দলের ভোটপ্রচার দেখে সত্যিই ভয় করছে। এত ভিড়ে কী করে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকবে! এই প্রযুক্তির যুগে কিন্তু ভিড় না-করেও অনেক কিছু সম্ভব বলে আমার মনে হয়। তা হলে রাজনৈতিক সভায় এত জোর কেন? অন্য ভাবে জনসমাগম এড়িয়েও তো মানুষের কাছে এখন অতি সহজেই পৌঁছনো যায়। ভোটের দিনগুলোও যত দূর সম্ভব সাবধানে কাজ সারতেই হবে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবার কাছে আর্জি, ভোটের গোটা প্রক্রিয়া যত দূর সম্ভব সাবধানতায় সারা হোক। ২০২০-র মানসিক চাপ, অসহায়তা যেন ফিরে না আসে!
আমি যেটা বুঝেছি, কোভিড শুধু অসুখ নয়। ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতি। যা মানুষকে আর্থিক বা মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত করে ফেলে। রোগ ছাড়াও আনুষঙ্গিক উৎকণ্ঠা, একলা হয়ে যাওয়া, অস্পৃশ্য হওয়ার বোধ মনে গভীর ছাপ ফেলছে। এটা ভেবেই সচেতন হওয়া জরুরি। এক বছর আগে কোভিডের ঘটনা ঘটলে বাড়ি ঘিরে রাখা হত। এখন আর তেমন পরিস্থিতি নেই। ঘরে ঘরে রোগ ছড়িয়েছে। সুতরাং সচেতনতা আরও দরকার। তা না-হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সর্বোত্তম চেষ্টা সত্ত্বেও প্রাণে বাঁচা বা পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখা কঠিন হবে। সেই সঙ্গে আবার লকডাউন পরিস্থিতি নিয়েও ভাবা উচিত। প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব থাকে। সবাই সবাইকে সাহায্য না-করলে এত বড় সমস্যা সামলানো যাবে না। ২০২০-র অতিমারির বছর কষ্টের মধ্যেও ইতিবাচক কিছু শিখিয়েছিল। মানুষ ধৈর্য শিখেছে। সহৃদয় হতে শিখেছে। সচেতন হয়েছে। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের নিয়ম নিয়ে ঢিলেমির উপায় নেই। এমন সঙ্কটের একটাই ভাল দিক, বিভেদ ভুলে মানুষ এখনও মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসে! অন্য সময়ের অনেক বিভাজনই তখন ঠুনকো মনে হয়।