ভোটের প্রশিক্ষণে দূরত্ব বিধির বালাই নেই। বহরমপুরে। বিদ্যুৎ মৈত্র
করোনা কালে বিধি মেনে কিভাবে ভোট গ্রহণ হবে তার জন্য সচেতন নির্বাচন কমিশন। অথচ সেই কমিশনের নির্দেশেই ভোটের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে কোভিড বিধি মানা হয়নি বলেই অভিযোগ তুললেন একাংশ ভোটকর্মী। জেলার ভয়াবহ করোনা আবহে ভোটের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তাঁরা। এর জন্য প্রশাসনিক উদাসীনতাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা। যদিও তা অস্বীকার করেছেন প্রশাসনের কর্তারা।
সপ্তম দফায় জেলার প্রথম নির্বাচন। চলতি সপ্তাহের সোমবারে শেষ হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমার ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণ। মঙ্গল ও বুধবার দু’দিন ধরে বাকি চারটি মহকুমায় ভোট প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ ও মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে প্রায় হাজার নয়েক ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণ ছিল ওই দু’দিন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনের তরফ থেকে স্যানিটাই়জারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে তা পর্যাপ্ত ছিল না বলেই অভিযোগ করেন ভোটকর্মীরা। জেলার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (প্রশিক্ষণ) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “যাঁরা মাস্ক পরে আসেননি তাঁদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যাঁদের করোনা উপসর্গ দেখা গিয়েছে তাঁদের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।” মূলত প্রিসাইডিং অফিসার, তাঁর তিন জন পোলিং অফিসার নিয়ে কিভাবে বুথ সামলাবেন তাঁর প্রশিক্ষণ ছিল এই দু’দিন।
সেখানেই কর্মীদের নিজেদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ববিধি না মানার অভিযোগ তুললেন প্রশিক্ষণরত ভোটকর্মীরা। কৃষ্ণনাথ কলেজে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া প্রবীণ ভোটকর্মী শিক্ষক সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “করোনা ঠেকাতে যেখানে পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি সেখানে পরিচালকমণ্ডলীর নির্দেশে একটা ছ’ফুটের ও কম বেঞ্চে চারজন করে বসতে বাধ্য হয়েছিলাম।” সে কথা অস্বীকার করে ওই আধিকারিক বলেন, “আমরা করোনার কথা মাথায় রেখে বড় বড় ঘরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম।” যদিও কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মত বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঘরগুলি মোটেই খোলামেলা ছিল না বলেই অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণ নিতে আসা ভোট কর্মীরা। ও ঘরগুলোর প্রত্যেকটাতেই ভোটকর্মীরা গায়ে গা লাগিয়ে বসেছিলেন বলে অভিযোগ। এক ভোটকর্মী দেবদুলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত কয়েকদিন যাবৎ জেলার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অথচ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কোথাও কোভিড বিধি মেনে কাজ হচ্ছে না।” ভোট গ্রহণের দিন দুই ধরনের ইভিএম মেশিন, ভিভিপ্যাড, ভোট সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে বুথে যেতে হবে ভোট কর্মীদের। সেখানেও বিধি মানতে প্রশাসন কঠোর না হলে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে “এইভাবেই ভোটের প্রশিক্ষণ হয়” বলে জানান ওই আধিকারিক।
একই সঙ্গে পোস্টাল ব্যলটে ভোট গ্রহণও চলেছে ওই দুটি কেন্দ্রে। সেখানেও ভোটদাতা ভোটকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বিধি মানার যেমন বালাই ছিল না তেমনি অধিকাংশ জনের মুখে ছিল না মাস্ক। মাস্ক থাকলেও তা থুতনিতে এসে ঠেকেছিল। এর থেকে করোনা ছড়াতে পারে বলে ওই শিক্ষকের আশঙ্কা। এই আশঙ্কার অভিযোগ করেছেন ওই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত অধিকাংশ ভোট কর্মীদেরই। তেমনি বারবার বারণ করা সত্ত্বেও একাংশ ভোট কর্মীদের মধ্যেও মাস্ক পরায় অনীহা দেখিয়েছেন বলে পালটা অভিযোগ করেছেন প্রশাসন।