Sayani Ghosh

সারা কলকাতা ছেয়ে যাক দিদির ছবিতে, আমার কোনও আপত্তি নেই: সায়নী ঘোষ

বুধবার তৃণমূলে নাম লেখালেন টলিউডের কয়েক জন শিল্পী। বাকি অভিনেতাদের নিয়ে যতটা না সাড়া পড়েছে, তার থেকে বেশি জলঘোলা সায়নীকে ঘিরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:২৭
Share:

সায়নী ঘোষ।

বুধবার হুগলিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তৃণমূলে নাম লেখালেন টলিউডের কয়েক জন শিল্পী। রাজ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়, জুন মাল্য, কাঞ্চন মল্লিক, মানালি দে এবং সায়নী ঘোষ ছিলেন সেই তালিকায়। বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে যতটা না সাড়া পড়েছে, তার থেকে বেশি জলঘোলা চলছে সায়নীকে ঘিরে। একদা ঘোষিত বামপন্থী সায়নীকে অনেকবারই দেখা গিয়েছে প্রকাশ্যে মমতা পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে। সেই তিনিই মমতার দলে যোগ দেওয়ায় মিমে-মিমে ছয়লাপ নেটমাধ্যম। এক দিকে সহ-অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র তাঁকে ‘বিক্রি হয়ে গেলি’ বলে কটাক্ষ করছেন। অন্য দিকে, নেটাগরিকরা তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবির প্রসঙ্গ তুলে তাঁর সরকার বিরোধিতার কথা। সায়নী অবশ্য ভোলেননি কিছুই। এড়িয়ে যেতেও চান না। নেটাগরিকদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালে।

Advertisement

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, একদা বামপন্থী সায়নী ঘোষ বিক্রি হয়ে গেলেন তৃণমূলে! কী জবাব দেবেন?

সায়নী: মানুষকে দোষ দিই না। আমাদের সহকর্মীরা যে ভাবে এ-দল ও-দল করছেন, তাতেই ঘাবড়ে যাচ্ছেন মানুষ। একটা দাগ ফেলে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আমার সঙ্গে সে সব মানুষকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আমি কখনওই সক্রিয় রাজনীতি করিনি এর আগে। কোনও দিন সিপিএমেও যোগ দিইনি। তবে মানুষের অভিমানটা আমি বুঝি। কিন্তু ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর ঘটনাটা সম্পূর্ণ আলাদা! আমি এক জন অভিনেত্রী হিসেবে অনীকদার (পরিচালক অনীক দত্ত) পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। শিল্পী হিসেবে সেই ঘটনাটাকে ভুল মনে হয়েছিল। সিপিএমের হয়ে বিরোধিতা করিনি এক বারও। তবে হ্যাঁ, একটা কথা সে বার বলেছিলাম। যা এখন ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমি বলেছিলাম, চলচ্চিত্র উৎসব জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি কেন থাকবে? এখন বলতে চাই, সারা কলকাতা ছেয়ে যাক দিদির ছবিতে। আমার কোনও আপত্তি নেই। তিনি ঘরের মানুষ। বাইরের নেতা-মন্ত্রীদের ছবির চাইতে ঢের ভাল। যাঁরা এই মাটির নন, তাঁদের ছবিতে শহর ভরে উঠলে নিজের বাংলাকে চিনতেই পারব না আর। এ বার ‘বিক্রি’ হওয়ার প্রসঙ্গে আসা যাক। আমার দলের (তৃণমূল) এত টাকা নেই, যে এখন মানুষ কেনাবেচা করবে। যে বা যারা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে, বৃহত্তর উদ্দেশ্যেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিজেপি-র কাছে অগাধ টাকা। তাই ওরা আগ্রাসনটা বাড়াতে পারছে। আমরা তো অভিনয় জগতে দেখেছি ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে একটা ছবি বানানো হলে তার প্রচারের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা তোলা থাকে। তাই বলছি, দলের ভেতরটা ফাঁপা হলেও প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা দেখনদারি করছে। মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।

Advertisement

খাতায়কলমে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পেছনে কী কারণ?

সায়নী: ধরে নিচ্ছি, আমি দলীয় রাজনীতির বাইরে। একা লড়ছি। এখন যদি এক জন মহিলা আমার কাছে নিরাপত্তা চান, আমি তাঁকে কী ভাবে আশ্বস্ত করব আমি জানি না। এত ভয়ানক একটা পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে আমরা! যদি একটি দলের সঙ্গে কাজ করতে পারি, তবে আমি আরও পাঁচটা মানুষকে সঙ্গে পাব। যাঁরা আমায় সেই মহিলাকে নিরাপত্তা দিতে সাহায্য করতে পারবেন। বলা ভাল, সব কিছু সাংগঠনিক ভাবে করতে পারব। ‘মানুষের কাজ করতে চাই’ গোছের বাক্যটাকে কিছু মানুষ এতটা খেলো করে দিয়েছেন, যে ও ভাবে বলতেও কেমন জানি বাধো-বাধো ঠেকছে। কিন্তু আমি জানি আমার উদ্দেশ্য কী। আর তার জন্য আমি প্রাণ দিয়ে লড়াই চালাব। জাহির করতে চাই না বাকিদের মতো। কিন্তু পাশে আছি। এটুকুই বলব। আমার কাছে রাজনীতিটা বিষয়গত। উদ্দেশ্যগত নয়।

তৃণমূলই কেন?

সায়নী: সিপিএম আমার শত্রু নয়। বামপন্থীরা আমার বন্ধু। কিন্তু গত ১০ বছরে সিপিএম নিজেকে সেই জায়গায় দাঁড় করাতে পারেনি, যেখানে মানুষ তাদের উপর ভরসা করতে পারে। তারা এখনও আসল শত্রুকে চিহ্নিত করতে পারছে না। মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের গদিচ্যুত করেছেন বলে তাঁকে সরাতে হবে। কিন্তু সরিয়ে কাকে আনতে চাইছি, সে দিকে এক বার নজর দেব না? আমরা তো সবাই বাংলার মানুষ। সিপিএম হোক বা তৃণমূল। এখন যদি সিপিএম, তৃণমূল এবং কংগ্রেস একজোট হয়ে বিজেপি-র আগ্রাসনকে আটকাতে চায়, আমি রাজি! নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করার সময় এটা নয়। আর আমি কেন তৃণমূলে যোগ দিলাম, তার উত্তরে দু’টো কথা বলব। এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী এ দেশে এখনও জন্মাননি। এমন এক জন মহিলাকে আমি শ্রদ্ধা করি। যখন তাঁর পাশ থেকে সকলে সরে যাচ্ছে, তখন আমি সেই মানুষটির পাশে দাঁড়াতে চাই। বিজেপি যখন আমাকে ভয়ানক ভাবে আক্রমণ করেছিল, আমাকে না চিনলেও মুখ্যমন্ত্রী ‌আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তো আমার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠেনি। তাও! দ্বিতীয়ত, বড় শত্রুকে আটকাতে হলে তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে চিহ্নিত করতে হবে। আর সেটা হল তৃণমূল। আমার সঙ্গে তাদের রাজনীতি মিলে যাচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।

ধরুন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতে গেল আর দলে দলে তৃণমূলকর্মী বিজেপি-তে চলে গেলেন। তা হলে?

সায়নী: রাজনীতি ছেড়ে দেব। যদি দেখি তৃণমূলের কোনও অস্তিত্বই থাকল না, তবে রাজনীতি ছেড়ে দেব। কিন্তু তবুও বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলাব না। যদি দেখি, বিজেপি নিজেদের ভাবমূর্তি পুরোপুরি বদলে ফেলছে। মহিলাদের দেখে মাথা নত করছে। সাম্প্রদায়িকতাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তা-ও আমি সে দলে নাম লেখাব না। কারণ, আমি তাদের বিশ্বাসই করি না। যে দলের কর্মীরা মাথা উঁচু করে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমরা সাম্প্রদায়িক!’’ সে দল দেশ চালাচ্ছে, ভেবেই চিন্তা হয়। সম্প্রতি একটি আলোচনা সভায় গিয়েছিলাম। অগ্নি’দি (ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল) সেখানে জোরগলায় সে কথা বললেন। ভাবা যায়! সংবিধানকে কতটা অস্বীকার করলে এমন দৃঢ়গলায় বলা যায়! তবে এ সমস্ত পরিস্থিতিই আসলে ‘ইউটোপিয়ান’। অর্থাৎ যা কেবল কল্পনায় চলে। বাস্তব রূপ নেয় না। বিজেপি কখনও বদলাবে না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। তিনি নিজের জায়গা থেকে সরে যাবেন না কোনও দিন। সব থেকে বড় কথা, তিনি জিতবেন। কারণ, মানুষ এখন যা-ই বলুন না কেন, উত্তরটা ভোটের মাধ্যমেই দেবেন।


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement