মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবশ্রী রায়।
আবার আলোচনায় বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। তাঁকে আলোচনায় নিয়ে এলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি শনিবার রায়দিঘিতে গিয়ে বললেন, ‘‘দেবশ্রীকে নিয়ে রায়দিঘিতে ক্ষোভ থাকায় তাঁকে এ বার প্রার্থী করিনি।’’ যার জবাবে রাজনীতি ছেড়ে আপাতত অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত দেবশ্রী বললেন, ‘‘ওঁর কথা উনি বলেছেন। কিন্তু ‘প্রার্থী করিনি’ বলা ঠিক নয়। বরং আমিই রায়দিঘিতে প্রার্থী হতে চাইনি।’’ একই সঙ্গে দেবশ্রী বলেন, ‘‘দিদিকে আদর্শ ভেবেই ওঁর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলাম। বুঝতে পারিনি, ওঁর থেকে এত বড় পুরস্কার পাব। দিদিকে ধন্যবাদ।’’
মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে। পর পর দু’বার ওই আসন থেকে বিধায়ক হয়েছেন দেবশ্রী। তবে এ বার আর তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। এর পরে দলও ছেড়ে দেন দেবশ্রী। শনিবার সেই রায়দিঘিতে প্রচারে গিয়ে বক্তব্যে দেবশ্রীর নাম টেনে আনলেন মমতা। তিনি উল্লেখ না করলেও তৃণমূলের দাবি, টোটো কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর জন্যই দেবশ্রীকে প্রার্থী করা হয়নি। পাশাপাশি এ-ও ঠিক যে, তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগেই দেবশ্রী দলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর রায়দিঘি থেকে ভোট লড়তে চান না। গত ৫ মার্চ প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে তৃণমূল। তার আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার ডিজিটালকেই দেবশ্রী বলেছিলেন, ‘‘টোটো কেলেঙ্কারির নামে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে সব কথা নেত্রীকে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়াতেই রায়দিঘি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এর পরে ১৫ মার্চ দেবশ্রী দল ছাড়ার চিঠি পাঠান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে। এ দিন রায়দিঘির ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি দেবশ্রী। তিনি শুধু বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে ওই আসনে জয় এনেছিলাম। মানুষ আমায় দেখেই ভোট দিয়েছিলেন। জানি না এ বার কী হবে। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।’’
শনিবার মমতা রায়দিঘির সভায় তাঁর নাম উল্লেখ করার পরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেবশ্রী বলেন, ‘‘রায়দিঘিতে আমায় নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কোনও ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ যেটা আছে, সেটা বরং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। অনেকের দুর্নীতি-তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় এবং বুলবুল, আমপানের ত্রাণচুরি নিয়ে সরব হওয়ায় কর্মীদের একটা অংশ চায়নি, আমি ফের বিধায়ক হই। আমায় দিনের পর দিন গালিগালাজ করা হয়েছে। ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রায়দিঘিতে গেলে প্রাণনাশ হতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।’’ প্রসঙ্গত, রায়দিঘিতে দেবশ্রীর বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন শান্তনু বাপুলি। যিনি প্রাক্তন বিধায়ক সত্য বাপুলির পুত্র। তবে বিধানসভা ভোটে তাঁকেও প্রার্থী করেনি তৃণমূল। প্রার্থী করা হয়েছে অলোক জলদাতাকে। অন্য দিকে, বিজেপি-তে যোগ দিয়ে শান্তনু রায়দিঘিতেই পদ্মের প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসনে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। আয়লার সময় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁর কাজ উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ২০১৬ সালে তাঁকে দেবশ্রীর কাছে হারতে হয়।