ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডিজিটাল।
বৃহস্পতিবার গনগনে উত্তাপের নন্দী-ভোটের পর শুক্রবার নতুন হইচই শুরু হল এক ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে। আনন্দবাজার ডিজিটাল ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। কিন্তু বিজেপি-র দাবি, নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলাকালীনই কোনও মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ওই ছবি ধরা পড়েছে। বিজেপি-র এও দাবি যে, তৃণমূলেরই কেউ ওই ভিডিয়ো তুলেছেন। তৃণমূল অবশ্য এই প্রচারকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে চাইছে না। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বালিগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা যত কুৎসিত প্রচার সব করে! ওরা অমানবিক!’’ ওই ভিডিয়ো কি সত্যি? উত্তরে সুব্রত বলেন, ‘‘ওদের সব কিছুই জোচ্চুরি আর জালিয়াতি!’’
শুক্রবার সকাল থেকেই ওই ভিডিয়ো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিকেলের দিকে তা ফেসবুকে পোস্ট করেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র প্রণয় রায়। পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম গোটা ঘটনাটাই নাটক। এ বার দিদিমণি নিজেই সেটা প্রমাণ করে দিলেন। যে পায়ে ব্যথার জন্য ওঁকে হুইলচেয়ার নিয়ে ঘুরতে হয়, সেই পা উনি দিব্যি নাচাচ্ছেন! আর সেই ভাঙা পায়ের উপরে আরেকটা পা চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’’ প্রসঙ্গত, ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, মমতা বসে রয়েছেন তৃণমূলের কোনও দলীয় কার্যালয়ে (বিজেপি-র বক্তব্য, সেটি তৃণমূলের নন্দীগ্রামের দফতর)। সেখানে টেবিলের তলা দিয়ে মমতাকে চোটগ্রস্ত বাঁ-পা দোলাতে দেখা যাচ্ছে। একটা সময়ে ব্যান্ডেজ করা বাঁ-পায়ের উপর ডান পা তুলে রাখছেন তিনি। ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুব্রত বলেন, ‘‘ভিডিয়োটা আমি দেখিনি। তবে যা শুনেছি, তাতে বাঁ পায়ের যেখানটায় ভাঙা সেখানে নয়, উনি অন্য জায়গায় ডান পা রেখেছেন।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বয়ালের মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বসেছিলেন মমতা। বুথের বাইরে উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়ে আসেন পদস্থ পুলিশ অফিসার ও কমিশনের কর্তারা। মমতাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং কমিশনের আধিকারিকরা কড়া নিরাপত্তায় বুথের চত্বর থেকে বার করে আনেন। এর পরে মমতা কাছেই একটি দলীয় কার্যালয়ে যান। বিজেপি-র দাবি, সেখানেই তোলা হয়েছে ভিডিয়োটি। এ নিয়ে দলের পক্ষে প্রণয় বলেন, ‘‘বুথেও যে মাননীয়া নাটক করেছেন, সেটাও স্পষ্ট এই ভিডিয়োতে। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, তিনি খোশমেজাজে আছেন। হাসতে হাসতে চায়ের আসর জমাচ্ছেন। চোখেমুখে কোনও কষ্টের ছাপ নেই। অথচ বুথে যখন ছিলেন বা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন তাঁকে ক্লান্ত দেখা গিয়েছে।’’ একই সঙ্গে প্রণয় বলেন, ‘‘আমি আগেই সংবাদমাধ্যমে বলেছিলাম, নন্দীগ্রামের ভোট মিটে গেলেই সহানুভূতি পাওয়ার অভিনয় শেষ হয়ে যাবে। অভিনয় করার অধিকার ওঁর আছে। কিন্তু নিজেদের যোগ্যতায় যাঁরা পুলিশ বা নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের দিয়ে হুইলচেয়ার ঠেলানোটা ঠিক নয়।’’
প্রসঙ্গত, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে পায়ে আঘাত পায়েছিলেন মমতা। এর পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সেই পা প্লাস্টারে বেঁধে নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েন তিনি। হুইলচেয়ারে বসেই একের পর এক পদযাত্রায় অংশ নেন। সভাও করেন। এখনও করছেন। ওই ঘটনাকে নিয়ে প্রথম থেকেই ‘নাটক’ বলে আক্রমণ করেছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে প্রচারের শেষ দিন এক পায়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতে অংশ নেওয়ার পরেও মমতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতারা। এ বার তাঁদের আক্রমণের অস্ত্র হয়ে উঠেছে এই ‘ভাইরাল’ ভিডিয়ো।
ফেসবুকে পোস্ট করা এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডিজিটাল।