চাকুলিয়ায় মৃত বিজেপি কর্মীর মত্যুর তদন্ত চান তাঁর মা। (ছবিতে বাঁদিকে)
তৃণমূলের এক নেতাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হল। রবিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় গুলিবিদ্ধ ওই তৃণমূল নেতা বারিক মোল্লাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় সোমবার সকালে এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল-আইএসএফ চাপানউতর শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিনাখাঁ থানার ধুতুরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরা বাগরা গ্রামে এক মেলায় গানের জলসা বসেছিল। স্থানীয় তৃণমূলের ধুতুরদহ অঞ্চলের নেতা বছর তিরিশের বারিক মোল্লা ওই জলসায় গেলে কয়েক জন দুষ্কৃতী খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বারিককে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ঘটনায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের এক কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
অন্য দিকে সোমবার চাকুলিয়ায় সত্যজিৎ সিংহ নামে এক যুবকের বাড়ির কাছের একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবকের মাথার পিছন দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিজের জামার ফাঁসই সত্যজিতের গলায় লাগানো ছিল বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতর শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সত্যজিৎ সিংহ। বছর বাইশের ওই যুবকের বাড়ি ডালখোলা থানার বেগুয়া গ্ৰামে। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরের পর থেকেই সত্যজিতের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরে সোমবার ভোরে বাড়ির পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা৷ পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে শেষ দেখা গিয়েছিল সত্যজিৎকে। স্থানীয় কিছু যুবকের সঙ্গে তাঁকে মদ্যপান করতেও দেখেছিলেন এলাকার কিছু মানুষ। পুলিশকে তাঁরা সে কথা জানিয়েওছেন।
সত্যজিতের পরিবার যদিও তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে সত্যজিৎকে। তৃণমূল যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, পারিবারিক কোনও সমস্যার কারণেই হয়তো আত্মহত্যা করেছেন সত্যজিৎ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চাকুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী শচীন প্রসাদ। পরে রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও যান সত্যজিতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। শচীনের অভিযোগ, ‘‘ভোটের আবহে আতঙ্ক ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতেই সত্যজিৎকে খুন করছে তৃণমূল।’’ দেবশ্রীর কথায়, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে খেলার কথা বলছেন, এটা সেই খেলা। এ ভাবে বিজেপিকে থামানো যাবে না।’’
চাকুলিয়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ শ্বেতাবুদ্দিন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার জেরেই এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’’ যদিও সত্যজিতের মা জয়ন্তীরানি সিংহ জানিয়েছেন, রবিবার তাঁর ছেলের সঙ্গে পরিবারের কারও কোনও অশান্তি হয়নি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস সত্যজিৎকে কেউ খুন করেছে।
এর আগে গত ১ এপ্রিল কোচবিহারের দিনহাটায় এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল তরজা চরমে উঠেছিল। সেই ঘটনায় রিপোর্টও চেয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। তার কয়েক দিনের মাথায় ফের বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ায় রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে ডালখোলায়। উত্তেজনা ছড়িয়েছে মিনাখাঁতেও।