আদর্শ: সাতগাছিয়ার স্কুলে মডেল বুথে চলছে ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পটভূমি আলাদা। তবু রবিঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’-এর অনুসরণে বলা যায়, এমন ভোট সব বুথে হয় না কেন, আহা! দেখেশুনে মনে হল, যেন কোনও থিম পুজোর দুর্গামণ্ডপ। যাঁদের হাতে সেখানকার কাজকর্মের রাশ, তাঁরাও সকলেই ‘দুর্গা’। গণদেবতার পুজোয় সকলেই শামিল।
চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা ধরনের পুতুল। নানা জেলার পটচিত্র। এখানে-ওখানে আলপনা। এক দিকে দোলনা। অন্য দিকে খড়ের ছোট্ট ঘরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সাতগাছিয়া কেন্দ্রের এই বিদ্যানগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়কে মডেল বুথ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার ওই বুথের কর্মকাণ্ড সম্প্রচার করা হয়েছে ৮১টি দেশে।
তবু কোথাও যেন ছন্দপতনেরও ছবি ফুটে ওঠে। সাতগাছিয়া ছিল জ্যোতি বসুর কেন্দ্র। সেখান থেকেই তিন বার জিতেছিলেন তিনি। সেখানে ভোটে বাকি সব দলের এজেন্ট থাকলেও সিপিএমেরই ছিল না। এত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থীর কোনও এজেন্ট নেই কেন? সাতগাছিয়া বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী গৌতম পাল বললেন, ‘‘ওখানে আমাদের উপরে হামলার আশঙ্কা আছে। ওই বুথের লাগোয়া মৌখালি এলাকায় শাসক দল এবং বিজেপি সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ভোটের পরে আমাদের এজেন্টের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জন্যই কোনও কর্মী এজেন্ট হতে চাননি।’’
ওই ‘মডেল’ বা আদর্শ বুথ পরিচালনার ভার ছিল ‘দুর্গা’, অর্থাৎ মহিলাদের হাতে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনেই সেখানে ভোট হয়েছে সারা দিন। স্কুলের মূল দরজায় দাঁড়িয়ে নীল শাড়ি পরা মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা হাতে স্যানিটাইজ়ার বা জীবাণুনাশক দিয়েছেন। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মেনে ভোটারেরা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আসা সন্তানদের আলাদা ঘরে রাখার ব্যবস্থাও ছিল মডেল বুথে।
ওই বুথের মোট ভোটার-সংখ্যা ৮২২। বেলা ১২টায় প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে বলে জানালেন প্রিসাইডিং অফিসার সুদেষ্ণা রায়। ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা তিনি। প্রথম বার বুথ পরিচালনা করছেন। ‘‘আমার দুই পোলিং অফিসারও প্রথম বার নির্বাচন পরিচালনার কাজ করছেন। ওঁরাও খুব আত্মবিশ্বাসী। ভোটার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এজেন্ট— সকলেই সহযোগিতা করেছেন। কোনও উত্তেজনা নেই,’’ বললেন সুদেষ্ণাদেবী। প্রথম পোলিং অফিসার বন্দনা সাহা। তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। দ্বিতীয় পোলিং অফিসার মৌমিতা দাস সেচ দফতরের কর্মী।
মডেল বুথে রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের সদ্ভাবও ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি বসে দুই যুযুধান দল বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্টরা। তৃণমূলের এজেন্ট সরোজ সর্দার এবং বিজেপির এজেন্ট প্রদ্যোত সর্দার সম্পর্কে কাকা-ভাইপো। পাশে রয়েছেন নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট রেজাউল শেখ। ভোটারদের নামের তালিকায় টিক মারছিলেন রেজাউল। সরোজ বলেন, ‘‘রেজাউল আমাদের প্রতিবেশী। সারা বছর নানা অনু্ষ্ঠানে সুখে-দুঃখে একই সঙ্গে থাকি।’’
বুথফেরত এক ভোটারের উপলব্ধি, ‘‘রাজ্যের ২৯৪টি কেন্দ্রের সব বুথই যদি এমন হত! তা হলে নির্বাচনে কোনও হিংসা বা রক্তপাত হত না। সকলে নিজের ভোট নিজেই দিতে পারতেন।’’