প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে মতুয়া, রাজবংশী ভোটের অঙ্ক নিয়ে টানাটানি আগেই দেখিয়েছে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। এ বার নাম করে তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের আবেগ ছুঁতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার শিলিগুড়ির সভা থেকে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তফসিলিদের ‘ঘৃণা’ করার অভিযোগ তোলেন। মোদী তাঁর বক্তব্যে গোর্খা, রাজবংশী, রাভা-সহ বিভিন্ন জনজাতির কথা উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে দাবি করেন, ‘‘দিদির তৃণমূলের ভাবনা কেমন, সেটা প্রকাশ্যে এসে গেছে। একটা ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেটা দেখে লোকে চমকে যাচ্ছে। সেই ভিডিয়োয় দিদির ঘনিষ্ঠ এক নেতা তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষদের অপমান করেছেন।’’ সে প্রসঙ্গ টেনে মোদী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘দিদি, এত অহঙ্কার? এমন ভাবনা আপনার?’’
তফসিলিদের অপমান প্রসঙ্গে মমতার উদ্দেশে মোদী এমন প্রশ্নও তোলেন, ‘‘সিডিউল কাস্ট পরিবারের বাচ্চাদের প্রতিও আপনি, আপনার পার্টি, আপনার নেতারা এত ঘৃণা পোষণ করেন?’’ সেই সঙ্গে দাবি করেন, বিজেপি-র প্রতি তফসিলিদের ভালবাসাই ঘৃণার কারণ। মোদী বলেন, ‘‘এটাই ওদের আসলে চেহারা। দিদি আর তার লোকেরা তফসিলিদের ভয় পায় কারণ, ওই সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিজেপি-কে সমর্থন করে।’’ একই সঙ্গে মমতাকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঈশ্বর আপনাকে বাংলার সেবা করার বড় সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আপনি সেই সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছেন আর বাংলার বরবাদ করেছেন।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া আরও এক ভিডিয়ো নিয়েও তৃণমূলকে আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘একটি ভিডিয়োয় দিদির ঘনিষ্ঠ শিলিগুড়ির কাছাকাছি এলাকারই বিধায়ক, বাংলার পর্যটন মন্ত্রী লোককে হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, বিজেপি-কে ভোট দিলে লোককে বাইরে তুলে বাইরে ফেলে দেওয়া হবে।’’ এটা উল্লেখ করে মোদী প্রশ্ন সমাবেশের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘এই ভাষা কি কেউ সমর্থন করেন? এই হুমকি কেউ সমর্থন করেন? গণতন্ত্রে এমন হুমকির জায়গা আছে কি? আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও ভারতের কোনও নাগরিককে বলতে পারি কি যে, তোমায় তুলে ফেলে দেব? আমার সেই অধিকার আছে কি? এটা গণতন্ত্র। কিন্তু দিদির মন্ত্রী ক্যামেরার সামনে বলছেন। সব ক্যামেরাবন্দি আছে।’’
শনিবার কোচবিহারের গুলিচালনা হোক বা অন্য প্রসঙ্গ— শিলিগুড়িতে সব নিয়েই মোদীর গলায় বার বার হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দিদি কী ভেবেছেন আপনি? বাংলার লোক আজ বিজেপি-কে ভোট দিচ্ছে বলে তৃণমূল তাঁদের বাইরে ফেলে দেবে! এত হিম্মত!’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলার লোক এখানেই থাকবে। দিদি লিখে রাখুন। যদি কাউকে যেতেই হয় তবে আপনি সরকার থেকে চলে যাবেন। আপনি বাংলার মানুষের ভাগ্যবিধাতা নন। বাংলার মানুষ আপনার জমিদারি নয়।’’ চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন মোদী আরও বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আপনাকে যেতেই হবে।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্য থেকে তোলবাজিও যাবে, সিন্ডিকেটও যাবে।