সংযুক্ত মোর্চার মিছিলে হান্নান মোল্লা। সুব্রত জানা
দিল্লির সীমানায় যে কৃষক আন্দোলন চলছে, তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনেও পড়বে বলে দাবি করলেন হান্নান মোল্লা।
উলুবেড়িয়ার টানা সাতবারের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হান্নান দিল্লির কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ। সংযুক্ত কিসান মোর্চার ছত্রছায়ায় এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে কৃষকদের প্রায় ৫০০টি সংগঠন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য যে ন’জনের কমিটি হয়েছে, তার অন্যতম সদস্য হান্নান। তিনি সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে মোর্চার পরিচালন কমিটিতে আছেন।
সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে বুধবার উলুবেড়িয়ায় এসেছিলেন হান্নান। তারই ফাঁকে তিনি কথা বললেন কৃষক আন্দোলনের নানা দিক নিয়ে। হান্নান বলেন, ‘‘তিনি হান্নান বলেন, ‘‘এ রাজ্যেও চাষিদের একটাই অভিযোগ। নরেন্দ্র মোদীর মতো এমন কৃষক-বিরোধী প্রধানমন্ত্রী এর আগে আসেননি। ফলে, বিজেপিই এখন চাষিদের প্রধান শত্রু। রাজ্যে রাজ্যে ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ বলে চাষিদের যে প্রচারাভিযান চলছে তা এ রাজ্যেও নির্বাচনের ঠিক আগেই হয়েছে। অভিযানের মূল বক্তব্য, যেই জিতুক— বিজেপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তবেই কেন্দ্রকে শিক্ষা দেওয়া যাবে। রাজ্যের ভোটের ফলে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব কিছুটা হলেও যে পড়বে, সেটা আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে টেরও পাচ্ছি।’’
প্রায় চার মাস ধরে চলতে থাকা কৃষক আন্দোলনে ঘন ঘন যোগ দিতে হচ্ছে হান্নানকে। সংযুক্ত কিসান মোর্চা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের ২৯টি রাজ্যে আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ ঘুরবেন এবং বিজেপিকে ভোট না-দেওয়ার আবেদন জানাবেন। এই রাজ্যেও এসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হান্নান। আন্দোলনকারীরা ফিরে গেলেও হান্নান থেকে গিয়েছেন রাজ্যে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের হয়ে প্রচারের জন্য। যদিও ভোট প্রচারের কাজে তিনি খুব বেশি সময় দিতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন। কারণ, ফের দিল্লিতে গিয়ে তাঁকে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে হবে। আজ, বৃহস্পতিবারই তাঁর দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা।
দিল্লিতে যে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের কৃষকরাই যে মূলত যোগ দিচ্ছেন, তা মেনে নিয়েছেন হান্নান। তবুও তিনি বলেন, ‘‘উত্তর বা পশ্চিম ভারতের মতো এত বড় আকারের না হলেও এ রাজ্যেও আন্দোলন হচ্ছে। তা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।’’ তিনি জানান, এ রাজ্যে গত চার মাসে ২৮ হাজার ছোট ছোট বিক্ষোভ-আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তা এখনও চলছে। ২৩টি বামপন্থী কৃষক সংগঠন মিলে সেইসব বিক্ষোভ-আন্দোলন করেছে। দেশজুড়ে কৃষক আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যে সাধারণ ধর্মঘট হয়, তাতে এ রাজ্যের চাষিরাও শামিল হন।
হান্নানের কথায়, ‘‘এমনিতে চাষ এখন আর লাভজনক নয়। দেনার দায়ে দেশে প্রতি ঘণ্টায় দু’জন করে চাষি আত্মঘাতী হচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার করে চাষি জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় চাষ এবং চাষিকে বাঁচাতে সরকারের সার-বীজের দাম কমানোর দরকার ছিল। বিভিন্ন ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অনেকটা উঁচুতে বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তা না করে সর্বনাশা কৃষি আইন পাশ করে চাষিদের ভিটেছাড়া করার চক্রান্ত করা হয়েছে। চাষিদের বহুজাতিক সংস্থাগুলির গোলামে পরিণত করেছে। সর্বনাশা কৃষি আইনের কুপ্রভাব থেকে এ রাজ্যের চাষিরাও তো বাঁচবেন না।’’
কতদিন চলবে আন্দোলন?
হান্নান বলেন, ‘‘সেটা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকার কতদিনে চাষিদের দাবি মেনে আইন প্রত্যাহার করে তার উপরে। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে ১১ বার আলোচনা করেছি। কোনও ফল হয়নি। এখন তো কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে আর আলোচনাও করতে চাইছে না। দেখা যাক, চাষিরাও দাবি আদায়ে কতদূর যেতে পারেন। আমরা সহজে বিষয়টি ছাড়ব না।’’