শীতলখুচি গুলি-কাণ্ডে আনন্দ বর্মণ ছাড়াও ৪ নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি সহায়তা পাবেন শীতলখুচিতে নিহত আনন্দ বর্মণের পরিবারও। জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় আনন্দের দাদু এবং মামা দেখা করেন মমতার সঙ্গে। গুলি-কাণ্ডে বাকি নিহতের পরিবারের মমতা সবক’টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। এর পর মাথাভাঙার জনসভা থেকে নিহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই সেই ‘সাহায্য’ কী ভাবে দেওয়া হবে, তা ঘোষণা করেননি মমতা।
নির্বাচন কমিশনের ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞার উঠতেই বুধবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় যান মমতা। মাধাভাঙার জনসভা থেকেই শীতলখুচির ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভোট মিটলে ঘটনার শীতলখুচি নিয়ে তদন্ত হবে। আনন্দ বর্মণকে যারা খুন করেছে, তাদের আমরা ধরবই। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নারাজ ছিল আনন্দের পরিবার। তবে শেষমেশ মাথাভাঙায় মমতার জনসভার আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন আনন্দের দাদু ও মামা।
চতুর্থ দফার ভোটে ১০ এপ্রিল কোচবিহারের শীতলখুচিতে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হন ১৮ বছরের আনন্দ। জীবনে প্রথম বার ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনি। শীতলখুচির ভোটে এর পরেও হিংসা অব্যাহত ছিল। ওই কেন্দ্রের অন্য একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আরও ৪ জন। গোটা ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিকরণের অভিযোগ করে বিজেপি। আনন্দকে নিজেদের কর্মী দাবি করে গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, ওই ৪ জনের নিহত হওয়া নিয়ে মন্তব্য করলেও রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত তথা তাঁদের কর্মী আনন্দের মৃত্যু নিয়ে নীরব মমতা। বুধবার রাজারহাটে ভোটপ্রচারে এসেও সে প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে আক্রমণ করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। নড্ডার দাবি, ‘‘শীতলকুচিতে বিজেপি কর্মী আনন্দ বর্মণকে খুন করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তবে আনন্দ বর্মণের মৃত্যু নিয়ে এখনও নীরব মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে একটাও শব্দ খরচ করেননি তিনি। এর থেকেই স্পষ্ট তৃণমূল দলিত বিরোধী।’’
তবে নড্ডার এই মন্তব্য নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে তৃণমূল। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের মন্তব্য, ‘‘জে পি নড্ডা মূর্খ। বাংলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত ৫-৬ বার আনন্দ বর্মণের সম্পর্কে বলেছেন। এবং সরকার নিহতের পরিবারকে যে সাহায্য দিচ্ছে, তা আনন্দ বর্মণের পরিবারকেও দেওয়া হবে। জে পি নড্ডা একে সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে যে ৫ জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের ৪ জন মুসলমান এবং ১ জন রাজবংশী বলছে বিজেপি। এটা বিজেপি-র অন্যায় রাজনীতির অংশ। এটার নিন্দা করা উচিত ছিল বিজেপি-র। বিজেপি একে নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ এবং বিভাজনের রাজনীতি করছে। এর নিন্দা করছি।’’