মনিরুলের সদ্যোজাত শিশুকে কোলে নিয়ে মমতা।
নিষেধাজ্ঞা উঠতেই কোচবিহারের শীতলখুচি গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্থ দফায় ভোট চলাকালীন সেখানে দফায় দফায় মোট ৫ জন নিহত হন। বুধবার তাঁদের সকলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল নেত্রী। নিহত মনিরুল হকের স্ত্রী-র কোল থেকে তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানকেও কোলে তুলে নেন তিনি। কথা বলেন আনন্দ বর্মণের মামা ও দাদুর সঙ্গেও।
বুধবার সকালে হুইলচেয়ারে বসেই শীতলখুচি পৌঁছন মমতা। সেখানে একটি মাঠে নিহতদের পরিবারদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সামনের সারিতে বসেছিলেন সকলে। একে একে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। কোলের শিশুকে নিয়ে মমতার কাছে এগিয়ে আসেন মনিরুলের স্ত্রী-ও। শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন মমতা।
এর পর মঞ্চে উঠে মমতা বলেন, ‘‘আজ কোনও সভা ছিল না এখানে। আমি শুধু নিহত ছেলেগুলোর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। আমার সঙ্গে পাঁচটি পরিবারই দেখা করেছে। আনন্দের দাদু এবং মামাও ছিলেন। হামিদুল, শামিমুল, মইদুল, নুর আলম এবং আনন্দ বর্মণ, প্রত্যেকের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করেছি। সবচেয়ে দুঃখ হচ্ছে যে এইটুকু টুকু ছেলেগুলো মারা গিয়েছে। এত অল্প বয়স। এক জনের তো দেখলাম স্ত্রী গর্ভবতী। এক জনের ছোট্ট শিশু। আরও একজনের বাচ্চাকে দেখলাম। তার দাদাও আগে মারা গিয়েছে। এই অবস্থা পরিবারগুলোর।’’
আনন্দ বর্মণ-সহ নিহত সকলেই সুবিচার পাবেন বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আনন্দ বর্মণ নামের আমার যে ভাইটি মারা গিয়েছে, এবং যে সংখ্যালঘু ভাইরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুতে বিচার হওয়া দরকার। যে-ই দোষী হোক না কেন, শাস্তি পাবেই, এখন নির্বাচন চলছে। মিটে যাক। আমি নিজে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করব।’’
প্রথম বার ভোট দিতে যাওয়া ১৮ বছরের আনন্দ বর্মণের মৃত্যুর তীব্র নিন্দাও করেন মমতা। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা আনন্দের দাদু এবং মামাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেন মমতা। আনন্দর মৃত্যু নিয়ে মমতা সে ভাবে সরব হননি বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু বুধবার শীতলখুচিতে মমতা বলেন,‘‘আমি আপনাদের সকলের ঘরের লোক। আমাকে ঘরের লোক বলেই মনে করুন।দোষীরা শাস্তি পাবেই। মানুষ এই হত্যার জবাব দেবেন।’’ নিহত পাঁচ জনের পরিবারই সরকারি সাহায্য পাবে বলেও জানান মমতা। একই সঙ্গে জানান, নিহত সকলের জন্য শহিদ বেদি তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা কোনও নেতা-নেত্রী কোচবিহারে প্রবেশ করতে পারেননি। তার উপর প্ররোচনামূলক মন্তব্য করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল নির্বাচন কমিশন। তার প্রতিবাদে মঙ্গলবার গাঁধীমূর্তির পাদদেশ সাড়ে তিন ঘণ্টা বসেছিলেন মমতা। রাত ৮টার পর নিষেধাজ্ঞা উঠলে ফের প্রচারে নামেন তিনি। তার পর সকাল হতেই শীতলখুচি ছুটে গেলেন। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘আমি পর দিনই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা আমাকে আসতে দেয়নি। সব নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। আপনারা শান্ত থাকুন। কোনও রকম প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমরা কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। দোষী যত বড় কেউ হোক না কেন, সাজা পাবেই। তার জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।’’ভোট মিটলে ফের শীতখুচি আসবেন বলে সকলকে প্রতিশ্রুতিও দেন মমতা।