নন্দীগ্রামে মমতার আহত হওয়া নিয়ে কটাক্ষ অধীর চৌধুরীর।
পড়ে গিয়ে পায়ে-মাথায়-কোমরে চোট লাগায় প্রচার কর্মসূচি থামিয়ে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার যে অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নির্বাচনী গিমিক ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপকতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবং মমতাকে এক আসনে বসিয়ে অধীর বলেন, ‘‘দু’জনেই নাটক করতে অভ্যস্ত।’’
নন্দীগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কর্মসূচি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু সন্ধ্যায় আচমকাই জানা যায়, পড়ে গিয়ে পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য রাতেই কলকাতা ফিরিয়ে আনা হয়। গাড়িতে নিয়ে আসার সময় জানলার কাচ নামিয়ে নিজেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। অভিযোগ করেন, মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভিড়ের মধ্যে চার-পাঁচ জন মিলে ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয় তাঁকে। তাতে পায়ে, মাথায় এবং কপালে চোট পেয়েছেন তিনি। পা ফুলে গিয়েছে। পিঠ এবং কোমরেও অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে তো বটেই, গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলতে শুরু করেন তৃণমূল নেতৃত্বও। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে রাজি হননি অধীর। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘উনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। পুলিশ-প্রশাসন, সব কিছুর মালিক উনি। সারা ক্ষণ পুলিশ, সিসিটিভি ক্যামেরা ওঁকে ঘিরে থাকে। অথচ হামলার সময়ই পুলিশ নেই! এটা কি আদৌ সম্ভব! গোটাটাই নির্বাচনী গিমিক। ভোগের আগে সমবেদনা আদায়ের চেষ্টা। আর এত জায়গা থাকতে নন্দীগ্রামেই হামলা হল! দেখাতে হবে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলা হচ্ছে।’’ অধীরের এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “নির্বাচন ঘোষণার পর পুলিশ-প্রশাসনের রাশ কমিশনের হাতে চলে যায়। সেটা বিরোধী নেতারাও বিলক্ষণ জানেন। এবং জেনেও মিথ্যে কথা বলছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে।”
অধীর আরও বলেন, ‘‘মোদী-মমতা দু’জনেই ভাল নাটক করতে পারেন। এ সব ভন্ডামিতে বিশ্বাস নেই আমার। মানুষের মধ্যে আবেগ তৈরি করতে চাইছেন। সহানুভূতি কুড়োতে চাইছেন। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর উপর যদি হামলার পরিকল্পনা থাকে, চার-পাঁচ জন মিলে হামলা চালাবে কেন? আরও বড় পরিকল্পনা থাকবে। আর যদি সত্যিই হামলা হয়ে থাকে, তা হলে বলতে হয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যিনি কি না রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও, তিনি যদি পুলিশ না পান, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে? সে ক্ষেত্রে মমতাকে স্বীকার করতে হবে যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
বুধবার মমতার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনই ডিওয়াইএফ নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট সংযুক্ত মোর্চা। মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনা করলেও, গোটা ঘটনায় পুলিশি নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মীনাক্ষীও। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চোট পেয়েছেন। ওঁর আরোগ্য কামনা করছি। স্বাস্থ্য দফতরের উপর ভরসা রয়েছে। কিন্তু উনি তো দলের কর্মীদের মধ্যেই ছিলেন! সেখানে কারা ঠেলে ফেলে দিলেন ওঁকে? উনি তো কথায় কথায় তদন্তের কথা তোলেন, এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’’