গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
মোট ৩৫। ১৬ যোগ ১৫ যোগ ৪। বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা। সাবেক মেদিনীপুর জেলা এখন তিন ভাগে বিভক্ত। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। প্রথম দু’দফার নির্বাচনে সাবেক ‘অখণ্ড’ মেদিনীপুরের ৩৫ আসনেই ভোট। সেই ৩৫টি আসনেই শক্তিশালী লড়াই দিতে মরিয়া বিজেপি। দলের অন্যতম প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ যে কোনও সমাবেশে ‘প্রচণ্ড’ শক্তির কথা বলেন। মেদিনীপুরের মেদিনীতে শক্ত ভিত গড়তে সেই ‘প্রচণ্ড’ শক্তি প্রয়োগেরই ছক কষেছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্র এবং রাজ্য বিজেপি-র পাশাপাশি সঙ্ঘ পরিবারের ‘অখণ্ড’ শক্তিও প্রয়োগ করা হবে।
ওই ৩৫ আসনের মধ্যে রয়েছে নীলবাড়ির লড়াইয়ের ‘ভরকেন্দ্র’ নন্দীগ্রাম। তার জন্য আলাদা পরিকল্পনা তো আছেই। সেই সঙ্গে বিজেপি চাইছে ওই তিন প্রশাসনিক জেলা থেকে বড় শক্তি সংগ্রহ করতে। রাজ্য বিজেপি-র দুই বড় মুখ সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু প্রার্থী হলেও বিধানসভা নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত প্রার্থী নন দিলীপ। কিন্তু গোপীবল্লভপুরের দিলীপ এবং কাঁথির শুভেন্দু অখণ্ড মেদিনীপুরের সন্তান। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি আর দিলীপ অখণ্ড মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’। দু'জনে মিলে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সব আসনে বিজেপি-র জয় নিশ্চিত করবেন। সেই স্বপ্ন সফল করতে মরিয়া বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
মেদিনীপুরে ১৯ ডিসেম্বর সমাবেশ করেছিলেন অমিত শাহ। সেখানেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মসূচিতে এসেও শুভেন্দু, দিলীপকে পাশে নিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশ করে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরে ১০ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামে ‘পরিবর্তন যাত্রা’-র সূচনা করতে যান বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। মাঝে হুগলির সাহাগঞ্জ ও কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশ করলেও মোদী প্রথম দু’দফার ভোটগ্রহণের আগে আরও তিনটি সভা করবেন বাংলায়। এর মধ্যে একটি পুরুলিয়ায় হলেও বাকি দু’টি মেদিনীপুরে। প্রথমটি ২০ মার্চ দিলীপকে প্রথমবার জনপ্রতিনিধি করা আসন খড়্গপুর সদরে। দ্বিতীয়টি শুভেন্দুর শৈশব থেকে যৌবন পার করা ‘ধাত্রীভূমি’ কাঁথিতে ২৪ মার্চ।
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
এ তো গেল মোদীর কর্মসূচি। অখণ্ড মেদিনীপুরে ‘প্রচণ্ড’ শক্তি দেখাতে আসছেন অমিত নিজেও। রবিবারই খড়্গপুর সদরে রোড-শো করার কথা তাঁর। পরের দিন সোমবার সমাবেশ করার কথা ঝাড়গ্রামে। বাঁকুড়াতেও একটি সমাবেশ করার কথা অমিতের। এর পরে একেবারে নন্দীগ্রামের মূল ভূখণ্ডে গিয়েও একটি সমাবেশ করার কথা অমিতের। ২৭ বা ২৮ মার্চ আসতে পারেন তিনি। তবে দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ বার অমিতের সফর মেদিনীপুরের জন্য উল্লেখযোগ্য। নীলবাড়ির লড়াইয়ের পর্বে এই প্রথম কলকাতার বাইরে কোথাও রাত্রিবাস করবেন অমিত। রবিবার তিনি থাকবেন খড়্গপুর শহরের একটি হোটেলে। সেখানে জেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করবেন।
‘অখণ্ড’ মেদিনীপুরে আসছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। তেখালিতে যে মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেই মাঠেই সভা যোগীর। হতে পারে ২৫ মার্চ। এ ছাড়াও বিহারের মন্ত্রী তথা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা শাহনওয়াজ হোসেন রবিবার দু’টি সমাবেশ করবেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর এবং নন্দকুমারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও রবিবার সমাবেশ করবেন মেদিনীপুর শহরের মানবাজার ও কাঁথি উত্তরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়কড়ি সোমবার সমাবেশ করবেন এগরা ও রামনগরে।
বিজেপি সূত্রে এখনও পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি জানা গিয়েছে। যদিও রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, এ ছাড়াও অনেক নেতা আসবেন। ‘অখণ্ড’ মেদিনীপুরের উপরে কি একটু বেশিই জোর দেওয়া হচ্ছে? দিলীপের জবাব, ‘‘এখন ওখানে ভোট রয়েছে। তাই ওখানে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গোটা রাজ্যেই এমন জোর দেওয়া হবে প্রচারে। রাজ্যের সব জেলাতেই যাবেন মোদী’জি। বারবার আসবেন অমিত’জি, নড্ডা’জি, যোগী’জি। আরও অনেকে।’’