অমিত শাহ।
নীলবাড়ি দখলে মরিয়া অমিত শাহ গোটা একটা রাত জরুরি বৈঠক করলেন বিজেপি-র কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে। কথা ছিল, সোমবার রাতে কলকাতা ছাড়বেন অমিত। কিন্তু তার বদলে পুরো সফরসূচি পাল্টে মঙ্গলবার সকালে দিল্লি ফিরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবং যাওয়ার আগে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, যে কোনও ভাবে বাংলা তাঁদের চাই। অমিতের সঙ্গে রাতভর ওই বৈঠকে ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাও।
সোমবার ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় সভা ছিল অমিতের। তার মধ্যে হেলিকপ্টার খারাপ থাকার কারণে তিনি ঝাড়গ্রামের সভায় আসতে পারেননি। সে কথা নিজে টুইট করেও জানিয়েছেন অমিত। কিন্তু শাসক তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, ঝাড়গ্রামের সভায় লোক হয়নি বলেই আসেননি অমিত। বস্তুত, ঝাড়গ্রামের সভায় অমিত বক্তৃতা করেন ভার্চুয়ালি। মোবাইলে তাঁর বক্তব্য শোনানো হয় সভায় উপস্থিত জনতাকে। মিনিট পাঁচেকের বেশি ব্যয় করেননি অমিত। কিন্তু তার মধ্যেই তিনি জানিয়ে দেন, প্রচারপর্ব মেটার আগেই তিনি আবার ঝাড়গ্রামে আসবেন। বাঁকুড়ার রানিবাঁধে অবশ্য পৌঁছেছিলেন অমিত। সেখানে লম্বা বক্তৃতাও করেন তিনি।
এর পর কলকাতায় পৌঁছে অমিত সটান চলে যান অসমে। সেখানে একটি সভায় তাঁর বক্তৃতা করার কথা ছিল। গুয়াহাটির ওই সভায় আধঘন্টা বক্তৃতাও করেন তিনি। তার পর দিল্লির বদলে ফিরে আসনে কলকাতায়। রাজারহাটের একটি হোটেলে কোর কমিটিকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অমিতাভ চক্রবর্তী, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, অরবিন্দ মেনন, অমিত মালব্যরা।
সূত্রের খবর, বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ে এবং বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ নিয়ে বৈঠকে জানতে চান অমিত। রাজ্য দলের তরফে তাঁকে জানানো হয়, বিজেপি এবার ক্ষমতায় আসবে ধরে নিয়ে লোকজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়েছে। তাই তারা সকলেই টিকিটের প্রত্যাশী হয়ে পড়েছে। সে কারণেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে। বিভিন্ন দলে বিভিন্ন সময়ে এমন হয়ে থাকে। তৃণমূল যখন প্রথম রাজ্যে একটি শক্তিতে পরিণত হচ্ছিল, তখন তাদের দলেও এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ হত। এমনকি, তা এখনও হয়ে থাকে। বাংলায় বিজেপি-র যে ভাবে উত্থান হয়েছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লোকের প্রত্যাশাও বেড়েছে। সে কারণেই কোথাও কোথাও ক্ষোভের স্ফূলিঙ্গ দেখা দিচ্ছে। তবে তা স্থানীয় স্তরেই সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন রাজ্যনেতৃত্ব।
পাশাপাশিই, রাজ্যনেতারা আমিতকে জানান, গ্রামেগঞ্জে এখন আলু ওঠার সময়। তাই ভরদুপুরে লোকজন আনতে কিঞ্চিৎ সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যার কর্মসূচিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। যেমন খড়্গপুরে অমিতের রোড-শোয়ে প্রচুর জনসমাবেশ হয়েছিল। অমিত অবশ্য তাতে কর্ণপাত করতে চাননি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তিনি নিজে বাংলায় ভোট পর্যন্ত থেকে যেতে পারেন। একটি সূত্রের খবর, ঈষৎ ক্ষুন্ন অমিতের রাজ্যনেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন ছিল, তাঁরা বাংলা দখল করতে চান, কি চান না! রাজ্যের নেতারা অবশ্য শীর্ষনেতাকে জানিয়েছেন, তাঁরা ভোটে জিততে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শেষপর্যন্ত গোটা রাতই গড়িয়ে যায় বৈঠক শেষ হতে হতে। শেষপর্যন্ত সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কলকাতা ছেড়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন অমিত। কিন্তু যাওয়ার আগে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে যান যে, নীলবাড়ির দখল বিজেপি-র চাই!