পূর্বস্থলীর জনসভায় অমিত শাহ। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
এক একটি দফার ভোট মিটছে আর বিজেপির আসন জয়ের দাবি ধাপে ধাপে বাড়ছে! সেই ধারা বজায় রেখেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বার দাবি করলেন, পাঁচ দফার ভোট থেকেই বিজেপি ১২২টি আসন জিতছে। ভোটে হারের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে পায়ে হেঁটে রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিতে যেতে পারেন, কটাক্ষের সুরে তার জন্য ‘শুভেচ্ছা’ও জানিয়েছেন তিনি!
রাজ্যে পাঁচ দফায় ১৮০টি আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে। আরও তিন দফায় ১১৪টি আসনের ভোট বাকি। এমতাবস্থায় ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে রবিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী এবং নদিয়ার নাকাশিপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর ও হাবড়া কেন্দ্রে প্রচারে এসে শাহ বারবার দাবি করেছেন, আগামী ২ মে তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত। মমতা যে হেতু জাতীয় স্তরে পরিচিত ‘বড় নেত্রী’, তাই বড় ব্যবধানে তৃণমূলকে পরাজিত করে ধুমধামের সঙ্গে তাঁকে বিদায় জানাতে হবে— সেই ডাকও দিয়েছেন শাহ।
পূর্বস্থলীর জামালপুরে এ দিন শাহ দাবি করেন, ‘‘পাঁচ দফার পরে দিদি বেশ হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। কারণ, পাঁচ দফায় ঠিক হয়ে গিয়েছে, বিজেপি ১২২ আসন নিয়ে দিদির থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। পাঁচ দফায় দিদির গুন্ডারা কিছু করতে পারেনি। তাই দিদি ভুল বকছেন।’’ তির্যক সুরেই তৃণমূল নেত্রীর ‘সুস্থতা কামনা’ করেছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর পায়ে প্লাস্টার রয়েছে। আমি তো রোজ প্রার্থনা করি, ২ মে-র আগে যেন দিদির পা ঠিক হয়ে যায়। ঠিক হওয়া দরকার, কারণ উনি যখন রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিতে যাবেন, যেন নিজের পায়ে হেঁটে যেতে পারেন!’’
নরেন্দ্র মোদী, শাহ বা জে পি নড্ডার মতো বিজেপি নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করছেন তৃণমূল নেত্রী। তার জবাব দিতে গিয়েই শাহ এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘দিদি, কেন মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন? আমরা তো আপনার বিদায়ের জন্য এসেছি, এখানে রাজত্ব করার জন্য আসিনি। দিদির বিদায় নিশ্চিত। কিন্তু দিদি বড় নেত্রী। দশ বছর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। গোটা দেশ তাঁকে জানে। বড় নেত্রীর বিদায় নিশ্চিত করো, তবে তা ধুমধামের সঙ্গে করো। নেতা যত বড়, তাঁর বিদায়ের ব্যবধানও তত বড় হওয়া উচিত, ঠিক কি না?’’ এই সূত্রেই শাহ ফের উল্লেখ করেছেন, নন্দীগ্রামে মমতার পরাজয় নিশ্চিত এবং বিজেপির সরকার এলে কোনও ‘ভূমিপুত্র’ই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
পূর্বস্থলী ও স্বরূপনগরের সভা এবং হাবড়ায় রোড-শো ও টাউন হল সভার অবসরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন সর্বত্রই দাবি করেছেন, ‘‘দিদি একটা নতুন মডেল চালু করেছেন। বোমা, বন্দুক আর বারুদের মডেল। এই মডেলকে পাল্টাতে চাই। এর জায়গায় বিশ্বাস, বিকাশ ও ব্যবসার মডেল আনতে চাই। যাতে সোনার বাংলা রচনা, সূচনা হবে। এই মডেল মোদীজির বিজেপি ছাড়া কেউ আনতে পারবে না।’’ নিজেদের বিদায় অবধারিত বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী এখন মঞ্চে উঠে কেবল মোদী ও বিজেপি নেতাদের গালি দিচ্ছেন বলেও শাহের অভিযোগ। রাজ্যে ‘ডবল ইঞ্জিনের সরকার’ হলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও কৃষক বিমার সুবিধা বাংলার মানুষ পাবেন— ফের এই আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশিই শাহের দাবি, বিজেপির সরকার এলে আর একটি গরুও পাচার হবে না!’’
শীতলখুচির ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও তৃণমূল প্রার্থীর ফোনে কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিক সভায় এ দিন ওই ক্লিপের প্রসঙ্গ এনেছেন শাহ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনারা শুনেছেন, দিদি বলছেন, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় যে চার জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের দেহ ট্রাকে করে নিয়ে আমাকে শোভাযাত্রা বার করতে হবে! আরে দিদি, লজ্জা হোক। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন? এত নিচু রাজনীতি জীবনে দেখিনি।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরও মন্তব্য, ‘‘তিনি বলছেন, এসপি আর আইজি-কে ‘ফাঁসাতে’ হবে। আপনার ফাঁসানোর দিন চলে গিয়েছে। এখন তো আপনি নিজেই ফেঁসে গিয়েছেন!’’