খোলা ভাগাড়েই পড়ে শহরের জঞ্জাল। ছবি: তাপস ঘোষ।
এ শহরের মুকুটে পালক কম নেই। ফরাসি উপনিবেশের সময় থেকে নানা ভাবে বিকাশ ঘটেছে এই জনপদের। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই জনপদ উজ্জ্বল। এখানকার আলোকশিল্পের খ্যাতি জগৎজোড়া। কিন্তু বর্তমান আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা সুখে আছে চন্দননগর?
বিধানসভা ভোটের মুখে এই জিজ্ঞাসা নানা মহলে। শাসক দল এখানে উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলছে। বিরোধীরা দেখছেন ভাটার টান। ২০১৫ সালের পুর-নির্বাচনে জনাদেশ নিয়ে চন্দননগর পুরসভার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু পুরসভার অন্দরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে মাঝপথেই রাজ্য সরকার পুরবোর্ড ভেঙে দেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুর কমিশনার-সহ পাঁচ জনের বোর্ড কয়েক দিন আগে পর্যন্ত পুরসভা চালিয়েছে। সেই বোর্ডে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং ভেঙে দেওয়া পুরবোর্ডেরই মেয়র-সহ একাধিক সদস্য ছিলেন।
এ নিয়ে বিরোধীপক্ষ তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বিস্তর। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচিত কাউন্সিলর না-থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই কাজে অসুবিধা হয়েছে। নাগরিক পরিষেবা খারাপ বই ভাল হয়নি। শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, নির্বাচিত ৩৩ জন কাউন্সিলরের পরিবর্তে মনোনীত পাঁচ জন যদি শহর ঠিকঠাক ভাবে পরিচালনা করেন, তা হলে প্রচুর অর্থব্যয় করে নির্বাচনের কী দরকার? জঞ্জাল অপসারণে এখনও চন্দননগরের মতো শহরের ভরসা খোলা ভাগাড়। কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের দাবি পূরণ হয়নি।
তবে, পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ মানেন না ইন্দ্রনীল। তাঁর দাবি, পরিষেবায় ঘাটতি হয়নি। তিনি নিজে পুরসভার কাজকর্ম তদারক করেছেন। কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পের তোড়জোড় চলছে। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে তাঁর দাবি। প্রশাসক বসার পরেও গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় প্রায় তিন হাজার ভোটে তৃণমূল এগিয়েছিল। উন্নয়নের জন্যই এটা হয়েছে বলেই তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য। তিন বছর আগে পুরসভার ভিতরে গোলযোগের কারণ হিসেবে বিরোধীদের ‘ইন্ধনের’ তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন বিধায়ক। বিরোধীরা সে কথা হেসে ওড়াচ্ছেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে ইন্দ্রনীলের কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন সিপিএমের গৌতম সরকার। এ বারেও গৌতমবাবুই সিপিএমের ভরসা। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের কাজে লাগে এমন উন্নতি বিশেষ হয়নি। আলো হাবে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে? শিল্পের হালও সকলের জানা। উন্নতি হয়েছিল বাম আমলে। এখন কিছু চমক হয়েছে মাত্র।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, চন্দননগর হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। বিভিন্ন ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুন হন। তার আগে-পরেও বিভিন্ন সময়ে ভদ্রেশ্বর বা চন্দননগরে দুষ্কৃতীমূলক কাজের অভিযোগ উঠেছে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে আঙুল তুলছেন বিরোধীরা।
চন্দননগর বিধানসভা এলাকার ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা তথা বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা বেবি তিওয়ারির অভিযোগ, ‘‘দিল্লি রোডের সঙ্গে চন্দননগরকে সংযুক্ত করে উড়ালপুল হয়েছে। কিন্তু তাতে উপকার হয়নি। ভুল জায়গা নির্বাচনের জন্য গাড়ি বিশেষ যায় না ওখানে। উড়ালপুল নানা অসামাজিক জায়গার আখড়া হয়েছে।’’
শাসক দল ওই অভিযোগ উড়িয়ে উড়ালপুলকে এলাকার ‘গর্ব’ বলে দাবি করছে।