সচেতন: সিসাহীন রং দিয়ে দেওয়াল লিখন সল্টলেকে ডিডি ব্লকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে প্রচার-যুদ্ধ। পাড়ায় পাড়ায়, অলি-গলির দেওয়ালে তুলির টান দিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। বিধাননগর জুড়েও চলছে তেমনই ব্যস্ততা। তার মধ্যেই স্বতন্ত্র একটি মাত্র দেওয়াল লিখন! কারণ, সেখানে ব্যবহার হয়েছে সিসাবিহীন রং।
শুক্রবার সল্টলেকের ডিডি ব্লকে ১১৬, বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসুর সমর্থনে সেই রঙেই দেওয়াল লিখেছেন তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকেরা। বিধাননগর পুরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর তুলসী সিংহরায় জানান, তাঁরা সিসাবিহীন রং ব্যবহার করেছেন। পরিবেশবান্ধব এই রঙের ব্যবহার তাঁরা আগে করলেও এ বছর আরও একটু বেশি এর ব্যবহার করছেন বলে জানান।
কিন্তু কেন ওই একটি দেওয়াল? অন্যত্র সেই সিসাযুক্ত রঙের ব্যবহারই তো হচ্ছে। ওই ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের কথায়, ‘‘সচেতনতার অভাব তো অবশ্যই রয়েছে। পাশাপাশি সিসাবিহীন রঙের খরচ বেশি। তাই দেওয়াল লিখতে এই রঙের ব্যবহার কম হয়।’’
বাসিন্দাদের কথায়, দূষণ নিয়ন্ত্রণে বছরভর পদক্ষেপ করা হয়। পরিবেশের ক্ষতি যাতে কম হয়, দেওয়াল লেখার ক্ষেত্রেও সেই দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়ার সূচনা হলেও তা যে হাতে গোনা মানছেন সকলেই।
বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের আবার যুক্তি, অধিকাংশ দেওয়াল
শাসকদলের নিয়ন্ত্রণে। যেটুকু দেওয়াল লেখার সুযোগ মেলে, সেখানে সাবেক রং-ই ব্যবহার করা হয়। সিসাবিহীন রঙের খরচ বেশি হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও তা করা যায় না। বিজেপি নেতা অনুপম ঘোষ বলেন, ‘‘দেওয়াল লেখার চল এখন কমে গিয়েছে। তবে এটা ঠিক যে সকলেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।”
যদিও খরচ বেশির কারণে সিসাবিহীন রং এড়িয়ে চলার এই ‘রাজনৈতিক’ যুক্তি মানতে চাইছেন না অনেকে। তাঁদের মতে, দলগুলি প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই ভেষজ রং ব্যবহার না করার যুক্তি মানা যাচ্ছে না। আসল হল দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনিচ্ছা, সেটাই এ ক্ষেত্রে বড় কথা।
পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নির্বাচনের সময়ে পরিবেশের বিষয়টি ব্রাত্য হয়ে যায়। প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে শুরু করে সিসাযুক্ত রঙের ব্যবহার― পরিবেশের পক্ষে প্রায় সব ক্ষতিকর জিনিসই প্রাধান্য পায়। অথচ ভেষজ রঙে তো লেখাই যায়। এ ক্ষেত্রে দলগুলি এগিয়ে এলে দ্রুত সচেতনতার বার্তা সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’