রানিগঞ্জের বিভিন্ন দেওয়ালে রাজনৈতিক দলগুলির ছড়ায় প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
ভোট-ময়দানে ‘খেলা’ হোক ছড়া-আর স্লোগানে। দূরে থাকুক বোমা-বন্দুক। ভোট-মরসুমে এমনই দাবি জনতার। জনতার এই দাবি মেনেই তাই এ বারেও ছড়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
ছড়ার ছন্দে আর কৌশলী শব্দ চয়নে একে অপরকে ব্যঙ্গ করার ঐতিহ্য এ রাজ্যে বহু দিনের। এ বারেও ভোট এগিয়ে আসতেই নতুন-নতুন ছড়ায় ভরে উঠছে দেওয়াল। যেমন, বিজেপি ও তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সিপিএম রানিগঞ্জের একাধিক দেওয়ালে লিখেছে, ‘যাহা পদ্ম তাহাই ঘাস, কাছে টানলে সর্বনাশ’। তেমনই রানিগঞ্জের একটি দেওয়ালে তৃণমূলের আহ্বান: ‘আমিও আছি, তুমিও রবে, এসো বন্ধু খেলা হবে’। পাল্টা বিঁধে বিজেপি-র দেওয়ালে লেখা: ‘মাঠে যখন নেমেছি, মন দিয়ে খেলব। একুশে বিজেপি, সরকার আমরাই গড়ব।’
ভোটমুখর বাংলায় এ বার ‘খেলা হবে’ স্লোগান বিতর্ক তৈরি করেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, এই স্লোগান হিংসায় ইন্ধন জোগাবে। তাই তা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। সম্প্রতি জেলায় বোমা ফেটে মৃত্যু, রাজনৈতিক মারামারির ঘটনা সামনে এসেছে। পূর্ব বর্ধমানে বোমায় প্রাণ গিয়েছে এক শিশুর।
এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের আর্জি, ‘খেলা’ হোক শুধু ছড়ায়-ছন্দে। কবি বিকাশ গায়েনের কথায়, ‘‘বোমা, গুলির আওয়াজ বন্ধ করে ছড়া-যুদ্ধে ভোট বৈতরণী পার করুক রাজনৈতিক দলগুলি। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লাভবান হবে। এটাই হওয়া উচিত।’’ তবে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অতীতে ছড়ার লড়াই যতটা ছিল, এখন তা অনেক কমে গিয়েছে।” হিরাপুর মানিকচাঁদ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিবেদিতা আচার্যের কথায়, ‘‘বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতবর্ষে নির্বাচন একটা উৎসব। ছড়ায় অনেক সময় সাহিত্য গুণ ততটা না থাকলেও নির্ভেজাল মজা পাওয়া যায়। সুস্থ পরিবেশও তৈরি হয়।’’
কী বলছেন রাজনীতিকেরা? তাঁরা সকলেই হিংসার বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন। বিজেপি জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘আমরা হিংসা চাই না। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। কিন্তু এ প্রশ্নে সকলকে এক অবস্থান নিতে হবে।’’ সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা হিংসামুক্ত রাজনীতির কথা বরাবর বলে এসেছি। রাজনীতিতে হিংসার কোনও জায়গা নেই, এটাই আমাদের অভিমত।’’ তৃণমূল জেলা সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা বরাবরই হিংসার বিরুদ্ধে।’’