শতাব্দী রায়, সাংসদ।
নিজের দলের কাছে সম্মান পেলে অন্য দলে যেতেন না তৃণমূল নেতাদের একাংশ। এমনই অভিমত তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিজেপি-তে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রশ্ন করা হলে শতাব্দী বলেছেন, ‘‘দল একটু চেষ্টা করলেই এই নেতা, সাংসদ, বিধায়কদের দলে ধরে রাখতে পারত। ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করলে তাঁরা দলে থেকেও যেতেন।’’ শতাব্দীর কথায় অনেকে মনে করছেন, ওই সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে তৃণমূলের ‘খামতি’ রয়েছে বলেই বলতে চেয়েছেন এই অভিনেত্রী-সাংসদ।
প্রসঙ্গত, শতাব্দী নিজেও তৃণমূল ছাড়ার বিষয়ে প্রায় মনস্থির করে ফেলেছিলেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সেকথা জানিয়েওছিলেন। দিল্লি গিয়ে তাঁর দেখা করার কথা ছিল বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষনেতা অমিত শাহের সঙ্গে। সেই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বীরভূমের সাংসদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর এবং দলের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। ওই বৈঠকের পর শতাব্দী জানান, তিনি তৃণমূলেই থাকছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন কঠিন সময়ে দল ছাড়া উচিত নয়।’’ শুক্রবারও সে কথাই পুনরাবৃত্তি করেছেন এই সাংসদ। শতাব্দী বলেছেন, ‘‘দল ভাঙানো তো বহুদিনের প্রক্রিয়া। নতুন ঘটনা নয়। তবে যারা এই প্রক্রিয়ায় পড়ে দলবদল করছেন, তাঁদের বলব, সামনে ভোট। দলের এখন খারাপ সময়। এই সময়ে অন্তত দলকে ছাড়া উচিত নয়।’’
শুক্রবারই বিধানসভা ভোটের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করার কথা তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই দলের ‘নীতি’ নিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন শতাব্দী। শুক্রবার তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বীরভূমের সাংসদ। সেখানেই তাঁকে তৃণমূলের দলত্যাগীদের নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তৃণমূল সাংসদ ওই কথা। বলেন। তবে রাজ্যে বিজেপি-র শক্তিবৃ্দ্ধি এবং উত্থান নিয়ে তৃণমূল যে কিছুটা হলেও ‘চাপে’ রয়েছে, তা এই প্রথম প্রকাশ্যে বললেন দলের কোনও সাংসদ। প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, শতাব্দীর অনতি-অতীত। যখন নিজেও অভিযোগ করেছিলেন দলে সম্মান পাচ্ছেন না। শুক্রবার তারাপীঠে শতাব্দীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দলত্যাগী তৃণমূল নেতারা কি সম্মান পাচ্ছেন না বলেই দল ছাড়ছেন? কোনও রাখঢাক না করেই শতাব্দীর জবাব, ‘‘এটা একটা বিরাট কারণ।’’ তবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিছুটা সংযত হয়ে শতাব্দী বলেন, ‘‘বাকিদের ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য কারণ থাকতে পারে। তবে আমার মনে হয়, দলের বিধায়ক এবং সাংসদদের যেমন দলকে সম্মান দেওয়া কর্তব্য, তেমনই দলেরও সমান দায়িত্ব এই নেতাদের সম্মান দেওয়া।’’ শতাব্দীর বক্তব্যে এই ইঙ্গিত মিলছে যে, এ ব্যাপারে দলে ‘খামতি’ রয়েছে। শতাব্দীর সঙ্গে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সম্পর্ক প্রথম থেকেই অত্যন্ত ‘মধুর’। সেই বিবাদের কারণেই ‘অসম্মানিত’ হয়ে শতাব্দী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-ত েযাওয়ার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ‘দিদির কথা’ ভেবেই তিনি এই ‘কঠিন সময়ে’ দলে থেকে গিয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন এই সাংসদ।