প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষার আগেই পরীক্ষা!
এই বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়ম নিয়ে কতটা জানেন? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা সম্পর্কেই বা তাঁদের কতটুকু ধারণা রয়েছে? এ সবই খতিয়ে দেখতে তাঁদের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ক্লাস নিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আর এই কারণেই পালা করে কলকাতায় ছুটছেন দলের প্রার্থীরা। তাঁদের পরীক্ষার আগে প্রায় ‘লাস্ট মিনিট্স সাজেশনে’র মতো করে নিয়মকানুন গেলাচ্ছে দল। উত্তরবঙ্গ থেকেও দফায় দফায় প্রার্থীরা হাজির হচ্ছেন সেই ক্লাসে।
এ বার তৃণমূলের নতুন মুখের সংখ্যা নেহাত কম নয়। শিলিগুড়ি সমতলেই অন্তত দু’টি নতুন মুখ। আগে নির্বাচনে লড়ে থাকলেও তাঁদের এ বার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ঝালাই পর্ব সেরে নিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। তাঁদের কলকাতায় ডেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সহকারে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কোন প্রার্থী কতটা ভোট-রাজনীতির মারপ্যাঁচ জানেন, সেটাও জেনে নিয়ে সেই মতো দাওয়াইও তাঁকে বা তাঁদের বাতলে দিচ্ছে তৃণমূল।
কী কী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এই ক্লাসে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরবঙ্গের এক তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘নির্বাচনের নিয়ম-বিধি সম্পর্কে যাঁর যাঁর ধারণা ভাল নয় বা একেবারেই নেই, তাঁদের নানা রকমের নথি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পড়ে ও শুনে তৈরি হয়ে নেওয়ার জন্য।’’ এগুলির মধ্যে কমিশনের নতুন বিধি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা যেমন রয়েছে, তেমনই একটি বড় সময় ধরে তাঁদের আদর্শ আচরণবিধি শেখানো হচ্ছে। সেগুলি কোথাও ভঙ্গ হলে কী করণীয়, বিরোধী দলের কেউ তা ভাঙলেই বা কীভাবে তাঁর মোকাবিলা করতে হবে— সেইসব নিয়মও বলে দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের।
তৃণমূলের কয়েকজন প্রার্থী অবশ্য পুরনো। তাঁদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁদের একটি অংশের দাবি, প্রতি বছরই নির্বাচনের আগে এ রকম কিছু কর্মশালা দলের তরফে আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বারের সেই কর্মশালাগুলিতে নিশানা বিজেপির দিকেই পুরোপুরি রাখার নির্দেশ আকারে-ইঙ্গিতে দেওয়া হয়েছে দলের প্রার্থীদের। প্রার্থীদের বলে দেওয়া হয়েছে, দলের তরফে প্রচারের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে। তার পাশাপাশি সেই প্রচার অভিযানের উপর নজরদারি চালাবে পিকে টিম। তাই প্রার্থীদের কেবল ভাল ভাবে তৈরি হয়ে নিতে হবে। যাতে কমিশনের আধিকারিকদের কাছে নানা কাজে গেলে তাঁরা সড়গড় থাকেন।
ভোট রাজনীতিতে একটি বড় অভিজ্ঞতা প্রার্থী হওয়া। মনোনয়ন থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন শাসক নেতারা। তাই সেখানে কোনও ফাঁক থাকুক চাইছেন না তাঁরা। এজেন্ট থাকলেও অনেক সময়ই প্রার্থীদের অনেকেই এই পদক্ষেপগুলিতে ভুলভ্রান্তি করে ফেলেন। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের অভিমুখ থেকে শুরু করে বিধির নথি, আরক গেলানোর মতো করে খাওয়ানো হচ্ছে প্রার্থীদের।
দলীয় সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের সব তৃণমূল প্রার্থী অবশ্য এখনও কলকাতায় যাননি। তাঁদের নির্দিষ্ট তারিখ এলেই সেখানে হাজির হতে বলা হয়েছে। ‘ছাত্ররা’ কতটা তৈরি তা দেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির টোটকা বলে দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। যাতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রার্থী অন্তত পাশ মার্কস নিয়ে আসেন।